Durga Puja 2021|| তলোয়ার নিয়ে ঘটোত্তলন-বিসর্জন, আতসকাচের আগুন নিয়ে হয় কেশিয়াড়ির দত্তবাড়ির হোম
- Published by:Shubhagata Dey
- news18 bangla
Last Updated:
Durga Puja 2021: সপ্তমীতে জমিদারির ঐতিহ্যের প্রতীক তলোয়ার নিয়ে ঘটোত্তলনে যান দত্ত পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরিরা। ঘট বিসর্জনেও বজায় থাকে একই আচার।
#কেশিয়াড়ি: তলোয়ার নিয়ে ঘটোত্তলন ও বিসর্জন, পুরানো নিয়মেই আজও হয় আতস কাচের আগুন নিয়ে কেশিয়াড়ির দত্তবাড়ির দূর্গা পুজার হোম।
একসময় জমিদারি ছিল। ছিল অঢেল সম্পদও। এখন জমিও নেই, জমিদারিও নেই। কিন্তু বজায় রয়েছে অতীতের ঐতিহ্য। আর সেই পুরানো ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির দত্ত পরিবার। কেশিয়াড়ীর আমতলা বাসষ্টপেজে নেমে পূর্বদিকে ৪০০মিটার পথ অতিক্রম করলেই দত্ত পারিবারের ঐতিহ্যপূর্ন বাড়ি। কয়েকবছর আগেও ছিল চুন-সুড়কি আর ঝামা ইটের প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটি। কালের নিয়মে এখন তা পাকা বাড়ীতে পরিণত।
advertisement
প্রায় গত ২০০ বছর ধরে দত্ত পরিবারে পটের দূর্গাপুজা হয়ে আসছে। আজও মাটির প্রতিমা নয়, পুজিতা হন পটের প্রতিমা। তবে অতীতের রীতি মেনে এখনও সপ্তমীতে জমিদারির ঐতিহ্যের প্রতীক তলোয়ার নিয়ে ঘটোত্তলনে যান দত্ত পরিবারের বর্তমান উত্তরসূরিরা। ঘট বিসর্জনেও বজায় থাকে একই আচার। পুরানো নিয়মে আজও আতস কাচের আগুন নিয়ে হোম অনুষ্ঠিত হয় বলে জানালেন বর্তমান উত্তরসূরিদদের অন্যতম সদস্য প্রসাদ দত্ত।
advertisement
advertisement
প্রসাদ বাবু বলেন, বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটের কারনে জৌলুসে সামান্য ঘাটতি থাকলেও প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যকে অক্ষুন্ন রাখার ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি রাখা হয়না। পুরনো আমলের চুন-সুড়কি, পোড়া ইট, আর ঝামাপাথরে তৈরি সেই রাজবাড়ী এখন বিদ্যমান। বর্তমানে যে নতুন পাকার বাড়িতে ওই রাজবাড়ির উত্তরসূরীরা বসবাস করেন তার ঠিক পেছনেই রয়েছে পুরনো ঐ রাজবাড়ি। বাড়িটির দক্ষিণ দিকে রয়েছে একটি পুষ্করিণী। যেখানে তখনকার দিনের শুধু রাজবাড়ীর মেয়েরা স্নান করতেন। পুরুষদের যাতাযাত ছিল কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। আজও সেখানে রয়েছে মজে যাওয়া পুকুর ঘাট। আর ঐতিহ্যের স্মারক বাড়িটিতে রয়েছে অসংখ্য ক্ষয়িষ্ণু সারিবদ্ধ দালান, আর ঠিক দুটি দালানের মাজ বরাবর রয়েছে একটি করে কুঠির, যে গুলিতে রাজ বাড়ির সদস্যরা এবং অতিথিরা থাকতেন।
advertisement

এইরকম পুরো বাড়িটিতে অসংখ্য কুটির রয়েছে। কুটিরের ভেতরেই রয়েছে সবুজ শ্যাওলা ও ছত্রাকে জড়িয়ে থাকা পেঁচানো সিড়ি। পুরো বাড়িটা এখন ভগ্নপ্রায়, জরাজীর্ণ পোড়া বাড়িতে পরিণত হয়েছে। আগাছায় ভরে গিয়েছে বাড়ির সমগ্র দেওয়াল। ওই বাড়ি গুলিতে এখন আর কেউ বাস করেন না। তবে ঐতিহ্যের শরিক হিসাবে তা এখনও বিদ্যমান। যেমনটা রয়েছে সেই আদ্যিকালের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের তরোয়াল। যা দিয়ে এখনো পর্যন্ত পুজোর ঘটোত্তলন ও ঘট বিসর্জন হয়। পুজোর এই কটা দিন এই তরোয়াল খানি বের করানো হয় সর্বসমক্ষে।আর বছরের বাকি দিন গুলিতে বাড়ির এক পুরনো রাজ আমলে তৈরি কাঠের বাক্সে তালা চাবি দিয়ে বন্ধ করা থাকে তরোয়ালটি।
advertisement
আরও পড়ুন: কলকাতার আগেই মায়ের বোধন কানাডায়, সাজো সাজো রব টরেন্টো জুড়ে
বর্ধমানের হরনারায়ণ দত্ত ছিলেন পেশায় উকিল। তিনিই একসময় এক রাজার কাছ থেকে উপহার স্বরূপ কেশিয়াড়ির ৩৬ মৌজা এবং গগনেশ্বরের একাংশের জমি লাভ করেন। দত্ত পরিবারের জমিদারি ছিল বিশাল আয়তনের। দত্ত পরিবারের কুলদেবতা রাধাকৃষ্ণের নিত্য পুজা হয়। এই পুজার পাশাপাশি হরিনারায়ণ দত্তই ২০০ বছর আগে পটের দূর্গা পূজার আয়োজন করেন। এখানে প্রথম থেকেই ছিল পটের পুজা। সেইসময় দূর্গা পুজা উপলক্ষ্যে চণ্ডীমঙ্গল, শিতলামঙ্গল যাত্রাপালা গানের আসর বসত মাসাধিক কাল। অসংখ্য মানুষ আসতেন। এখন আচার মেনে শুধু পুজা হয় পটের দেবী দশভূজার। যেহেতু কেশিয়াড়িতে দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দির রয়েছে তাই মূর্তি পুজা হয়না।
advertisement
আরও পড়ুন: 'বুর্জ খলিফা'র টানে যেতে হবে না দুবাই! পুজোর শহরেই দেখে নিন পৃথিবীর উচ্চতম নির্মাণ! কোথায় জানেন?
প্রসঙ্গত, কথিত রয়েছে কেশিয়াড়িতে দেবী সর্বমঙ্গলার মূর্তি পূজা হওয়ায় এ অঞ্চলে তখনকার দিনে আর কোন প্রত্যায়িত মূর্তিরূপ পূজা করা যাবে না। সেই থেকে কেশিয়াড়িতে অবস্থিত সমগ্র রাজবাড়ি গুলিতে মূর্তি পূজা হয় না। হয় পট নয় ঘটের পুজো। এখন অবশ্য বেশ কয়েকটি সার্বজনীন দুর্গা পূজো হয় কেশিয়াড়ি জুড়ে। তবে সে গুলিতে মূর্তি পূজাে হয়ে থাকে।দত্তবাড়ীর এই দুর্গা পুজোতে বংশ পরম্পরায় এখানকার শোলার পট তৈরি করেন কেশিয়াড়ির মালাকার পরিবার। বর্তমানে শংকর মালাকার সেই পটের মূর্তি গড়েন। আবার দুর্গাপূজায় যত রকম মাটির জিনিসপত্র লাগে, সেগুলি সরবরাহ করেন বেরা পরিবারের সদস্যরা। এঁদের এই পরিষেবা দেওয়ার জন্য ওই জমিদার বংশ থেকে পরিবারগুলিকে জমি ও দেওয়া আছে।
advertisement
আরও পড়ুন: করোনার জেরে এ বারেও লকার বন্দি জয়পুর রাজবাড়ির 'সোনার দুর্গা', মন খারাপ পুরুলিয়ার
এখন দত্ত পরিবারের মোট তিনটি শরিক। দূর্গাপূজার সময় এই পরিবারের সমস্ত সদস্যরা একত্রে মিলিত হন। দুর্গাপুজার দিনগুলিতে একসঙ্গে রান্না করা, খাওয়া দাওয়া আনন্দ উৎসব করে থাকেন। প্রত্যেক বারে শরিকদের মধ্যে পুজার দায়িত্ব বন্টন হয়। প্রসাদ বাবু জানান, এবার পুজার দায়িত্ব তিনি নিজে নিয়েছেন, তবে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও সমান ভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। এখানে দূর্গা পুজার ঘট দশমীতে বিসর্জন হলেও পটের প্রতিমা নিরঞ্জন হয় লক্ষ্মী পূজার পর। বর্তমান উত্তরসূরিদের বক্তব্য, একদিকে সীমাহীন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে জমিদারির কোন সম্পত্তি না থাকায় পুজা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ছে ক্রমশই। তারই মধ্যে পুরানো ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন দত্ত পরিবার।
তথ্য সহায়তা: পার্থ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
September 28, 2021 7:19 PM IST
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
Durga Puja 2021|| তলোয়ার নিয়ে ঘটোত্তলন-বিসর্জন, আতসকাচের আগুন নিয়ে হয় কেশিয়াড়ির দত্তবাড়ির হোম