#দিঘা, পূর্ব মেদিনীপুর: পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পর্যটন মুকুটে অন্যতম পালক দিঘা থেকে কাঁথির শৌলা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ। অর্থাৎ সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল জুড়ে ছুটে যাবে গাড়ি, এক পর্যটন কেন্দ্র থেকে আরেক পর্যটন কেন্দ্রে। মেরিন ড্রাইভ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন ১৪ সেপ্টেম্বর পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে উপস্থিত থেকে। কিন্তু উদ্বোধনের এক মাসের মধ্যেই প্রশাসনিক নির্দেশিকায় বন্ধ হয়ে গেল মেরিন ড্রাইভ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র দিঘা সমুদ্র সৈকত পর্যটন কেন্দ্র শংকরপুর, মন্দারগুলি, তাজপুর। এই সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রে যোগসূত্র গড়ে তুলতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে মেরিন ড্রাইভ গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেইমতো দিঘা থেকে কাঁথির শৌলা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মাঝামাঝি এই মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন Birbhum News : হারিয়ে গিয়ে ফিরে এল সিউড়ির শিশু! ১৩ কিমি দূরে মিলল খোঁজ
উদ্বোধনের পর থেকেই পুজোর ছুটিতে দিঘায় বেড়াতে আসা পর্যটকেরা মেরিন ড্রাইভ ধরে ঘুরতে গিয়ে এই বিপত্তির মুখে পড়ে। কারণ মেরিন ড্রাইভ সম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলা যায়নি প্রাকৃতিক কারণেই। যার ফলে মেরিন ড্রাইভের একাংশ এখনও যাতায়াতের উপযুক্ত নয়। আর সেই জায়গায় বিপত্তির মুখে পড়ে পর্যটকদের গাড়ি। মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধনের পরে কেন এই বিপত্তি! প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দিঘা থেকে কাঁথির শৌলা পর্যন্ত এই মেরিন ড্রাইভের একাংশ এখনও সম্পূর্ণভাবেই গড়ে তোলা যায়নি, প্রাকৃতিক কারণেই।
দুর্বিষহ রাস্তায় ভোগান্তির জেরে পর্যটকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের বিজ্ঞাপিত মেরিন ড্রাইভ গর্তে ভরপুর, বেহাল দশা। গাড়ি ভাড়া করে বেড়াতে এসে মেরিন ড্রাইভে ঘোরার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে পর্যটকদের। পুজোর সময় রাজ্যের তো বটেই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকদের অনেকেই এই মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে গিয়ে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে পড়েছেন। অনেককেই আটকে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে। ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই মেরিন ড্রাইভের মোট দৈর্ঘ্য ৩০ কিলোমিটার। দিঘা থেকে শঙ্করপুর, তাজপুর হয়ে মন্দারমণি পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
কিন্তু নতুন মেরিন ড্রাইভের রাস্তা রাস্তা যে সঠিকভাবে গড়ে তোলা হয়নি তা উপলব্ধি করেছেন ঘুরতে আসা পর্যটকরা। পর্যটকদের অভিযোগ, শঙ্করপুরের কাছে এসে তাজপুর পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তার অবস্থা ‘দুর্বিষহ। পর্যটকদের অভিযোগ, ওই রাস্তায় নেই কোনও সতর্কতামূলক বোর্ড। যার ফলে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমে সটান গর্তে ফেঁসে যেতে হচ্ছে তাঁদের। এই রাস্তার কোথাও কোথাও সেই গর্ত প্রায় তিন ফুটের কাছাকাছি। গাড়ি এক বার ফেঁসে গেলে সেই বিপদ থেকে মুক্তি পেতে পর্যটকদের কালঘাম ছুটছে। এক তো গাড়ি উদ্ধার করতে সময় লাগছে বিস্তর। একই সঙ্গে টাকাও খরচ হচ্ছে বিস্তর।
আরও পড়ুন Weather Update| Birbhum: টানা পাঁচ দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস, কেমন থাকবে বীরভূমের আবহাওয়া?
এমনি অভিজ্ঞতা হলদিয়া থেকে বেড়াতে যাওয়া দেবদুলাল পট্টনায়েকের। তিনি তাঁর মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিঘা থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে রওনা হয়েছিলেন মেরিন ড্রাইভের উদ্দেশ্যে। শঙ্করপুর যাওয়ার আগে গাড়ি একটি গর্তে পড়ে যায়। কোনও মতে গাড়ি তুলতে না পেরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্যে ফিরতে হয়। তার জন্য খরচ করতে হয়েছে দু'হাজার টাকা। দেবদুলাল পট্টনায়ক বলেন "আমাদের গাড়িটা এমন ভাবে ফেঁসে গিয়েছিল, যা তুলতে অনেক সময় লাগে। যারা এ কাজ করেছেন বিপদের সময় তারা যা বলেছেন সেই টাকাই দিতে হয়েছে।"
প্রশাসনের দাবি বেশ কয়েকটি জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় মন্দারমণি এবং শঙ্করপুরের মাঝের রাস্তাটি পুরোদস্তুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেচ দফতর এই রাস্তার মেরামতি চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সমুদ্র বাঁধ সারাইয়েরও কাজ চলছে। ফলে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে পর্যটকদের অসুবিধার মুখে পড়তে হয়েছে। বর্তমানে প্রশাসন তরফ থেকে এই মেরিনড্রাইভ যাতায়াতের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই মেরিন ড্রাইভের রাস্তা সম্পূর্ণভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে তা শীতকালের মধ্যেই সম্ভব হয়ে যাবে। এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “ওখানে কাজ চলছে। রাস্তা বন্ধের জন্য বোর্ড লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কেন লাগানো হয়নি, জানতে চেয়েছি। এখন ওই রাস্তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলেই রাস্তা খুলে দেওয়া হবে।"
Saikat Sheeনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Mandarmoni, Marine Drive, Tajpur