#নয়াদিল্লি: তিনি ভোট স্ট্র্যাটেজিস্ট। তিনি এক সময় নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী কুশলী, আবার সেই নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের হারাতেই তিনি হাত ধরেছেন বিরোধীদের। গত বছরও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলায় জিতিয়ে আনার অন্যতম মাস্টার মাইন্ড এই প্রশান্ত কিশোরই। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে যখন বিজেপি বিরোধী জোটের আবহ নানা স্তরে, তখন প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে বিস্তর টালবাহানা চলল বিগত কয়েকদিন। সনিয়া গান্ধি সহ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বারংবার বৈঠকের পরও অবশ্য সেই যোগদান আর হল না। গত মঙ্গলবার পার্টি কমিটিতে যোগ দেওয়ার কংগ্রেসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। ট্যুইট করে লিখেছেন, “আমি EAG (Empowered Action Group) এর অংশ হিসাবে পার্টিতে যোগ দেওয়ার এবং নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য কংগ্রেসের উদার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। আমার বিনীত মতামত, রূপান্তরমূলক সংস্কারের মাধ্যমে গভীরে থাকা মূল সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য দলীয় নেতৃত্ব এবং সম্মিলিত সদিচ্ছার প্রয়োজন।'' কিন্তু কংগ্রেসে কেন যোগ দিলেন এই নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট?
কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলে যোগ দিয়েই প্রশান্ত কিশোর দু'নম্বর নেতার মর্যাদা চেয়েছিলেন। প্রশান্ত চেয়েছিলেন অন্য কারও কাছে নয়, সরাসরি তিনি দলের সভাপতির কাছে রিপোর্ট দেবেন। কিন্তু তাতে রাজি হননি সনিয়া গান্ধি। বরং উল্টে সনিয়া তাঁকে এমপাওয়ার্ড অ্যাকশন গ্রুপ ২০২৪-এর নির্দিষ্ট দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। কিন্তু এই ভূমিকা নিতে রাজি হননি প্রশান্ত কিশোর। এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা থাকত উপদেষ্টা হিসেবে। প্রশান্ত কিশোর চেয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাক তাঁর হাতে, কিন্তু কংগ্রেস তা মেনে নেয়নি।
শুধু দলের দায়িত্ব নয়, দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্বও চেয়েছিলেব প্রশান্ত কিশোর। প্রার্থী বাছাই থেকে টিকিট বন্টন, সবকিছুতেই তাঁর নিয়ন্ত্রণ দাবি ছিল প্রশান্তের। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেনি। কংগ্রেসের একটা মহল থেকে বলা হয়েছিল, প্রশান্ত কিশোরকে এই দায়িত্ব দিলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির পাশাপাশি রাজ্য কংগ্রেস কমিটিগুলিও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে।
২০২৪-এর নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে বিরোধীদের জোট অনিবার্য। সেই জোট গড়ার ক্ষেত্রেও একা সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। বিভিন্ন রাজ্যে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট করুক কংগ্রেস, এমনটাই মত ছিল তাঁর। মহারাষ্ট্র, বিহারের মতো রাজ্যে কংগ্রেস তাদের পুরনো সহযোগীদের এড়িয়ে তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে চন্দ্রশেখর রাও, জগনমোহন রেড্ডি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সঙ্গে জোট করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রশান্ত কিশোর। বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে হারাতে এই জোট অনিবার্য। কিন্তু কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি।
আরও পড়ুন: খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে এতটা অমানবিক! প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মার অভিভাবকদের
প্রশান্ত কিশোর ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে টার্গেট করেই যাবতীয় পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করেছিলেন, সামনে গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে বিধানসভা ভোটও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে ভাল ফল কর্মীদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস নেতারা।
আরও পড়ুন: 'গরমের ছুটি এগিয়ে পড়াশোনা লাটে তোলার চক্রান্ত' মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ দিলীপের
নির্বাচনী কৌশলবিদ পিকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। এই সময়ে তিনি বিগত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনী পরাজয়ের ধারাবাহিকতা থেকে দলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাঁর পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশনও দিয়েছেন। যদিও সূত্রের খবর, কমিটিতে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি এবং অম্বিকা সোনির মতো নেতারা পিকের পক্ষে রইলেও দিগ্বিজয় সিং, মুকুল ওয়াসনিক, রণদীপ সুরজেওয়ালা এবং জয়রাম রমেশের মতো নেতারা প্রশান্ত কিশোরের বিপক্ষেই ছিলেন। শেষমেশ আর হাত ধরা হল না পিকের।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Congress, Prashant Kishor