কালীপুজোর আগের দিনটি পালন করা হয় ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chatrudashi) তিথি হিসেবে ৷ এ দিনের সঙ্গে ১৪ সংখ্যাটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে৷ প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এদিন রাতে বাড়িতে ১৪ টি প্রদীপ (14 earthen lamps on Bhoot Chaturdashi) জ্বালতে হয়৷ বিশ্বাস, হেমন্তের রাতে এভাবেই উত্তসূরির কাছে আলো দেখেন স্বর্গত ১৪ পুরুষ৷ শীতের আগে পাতাঝরা হেমন্ত পূর্বজদের স্মরণ করার ঋতু৷ তাই এই সময়েই সন্ধ্যা হলে হলেই দূরের তারার দিকে তাকিয়ে জ্বলে ওঠে আকাশপ্রদীপ৷
এ তো সব রাতের পালনীয় রীতি৷ তার আগে দিনে খেতে হবে ১৪ রকম শাক (14 shak on Bhoot Chaturdashi)৷ বাঙালি বাড়িতে দৈনন্দিন আহারে যে শাকপাতা রান্না করা হয়, তাদের থেকে এদিনের শাক কিন্তু আলাদা৷ এই ১৪ শাক সম্পূর্ণ ভেষজ গুণে ভরপুর৷ আমরা অনেকেই তাদের নাম ঠিক করে জানি না৷ বাজারে যে আঁটি বিক্রি হয়, তাতেও ওষধির পরিবর্তে মিশে থাকে সাধারণ প্রচলিত শাকপাতাই৷ এই ঋতু পরিবর্তেনের সময় শরীরকে নানা সমস্যার থেকে রক্ষা করে এই ভেষজ শাকগুলি৷
আরও পড়ুন : হাঁপানির সমস্যার জেরে কষ্ট হয় আতসবাজির দূষণে? রইল বাঁচার উপায়
ওল- সব্জি হিসেবে খেলেও আমরা অধিকাংশই এর পাতা বা শাক কেমন দেখতে চিনি না ৷ খাওয়া যায় ওলের ডাঁটাও৷ আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, ওলশাক রক্ষা করে মরসুমি ঠান্ডা লাগা এবং সর্দিকাশির হাত থেকে৷ অরুচি দূর করে৷ পরিপাকক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে ওলশাক৷
কেঁউ- গুল্মজতীয় এই গাছ ঝোপঝাড়েই বেশি জন্মায়৷ কৃমির সমস্যা কমাতে, অখিদে দূর করতে আয়ুর্বেদশাস্ত্রে কেঁউশাকের গুরুত্ব আছে৷ এছাড়া চর্মরোগ নাশ করার জন্যও এই শাক উপকারী৷ নিয়মিত সেবনে বাড়ে ত্বকের লাবণ্যও৷
বেতো- লিভারকে সুস্থ রাখতে বেতো শাক জুড়িহীন৷ এছাড়া অখিদে, কৃমির সমস্যা, পাইলসের যন্ত্রণা উপশমেও কার্যকর এই শাক৷ কিডনিতে পাথর হলে বা মূত্রত্যাগের সময় প্রদাহ অনুভব করলে বেতো শাকের রস খেলে আরাম পাওয়া যায়৷
আরও পড়ুন : ‘ঝুটো পাথর’ ভেবে আর একটু হলেই ডাস্টবিনে, তরুণীর হাতে ২০ কোটির হিরে!
সর্ষে- এই শাক খাওয়ার চল আছে অবাঙালি পরিবারেও৷ পঞ্জাবি রান্নার ‘সর্ষো কি শাগ’ ভেষজ গুণের আধারও৷ এই শাক খেলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা গুড কোলেস্টেরল বাড়ে৷ দেহে ভিটামিন ডি তৈরি করতে সাহায্য করে৷
কালকাসুন্দে- অ্যালার্জি-সহ ত্বকের যে কোনও সংক্রমণ, কোষ্ঠকাঠিন্য, জ্বর ও ক্ষত নিরাময়ের জন্য এই গুল্মপাতা ব্যবহৃত হয়৷ সর্দিকাশি জ্বরে এই পাতার রস দেওয়া হয়৷ অরুচি এবং পেটের রোগ কমাতেও এই শাক উপকারী৷
নিম-এই পাতার উপকারিতা তো বলে শেষ করা যায় না৷ মধুমেহ এবং পেটের রোগ প্রশমনে নিমপাতার মতো কার্যকারিতা বিরল৷ নিয়মিত নিমের রসে উজ্জ্বল থাকে ত্বক৷ বাচ্চাদের কৃমির সমস্যা দূর করতেও নিমের রস খেতে বলা হয়৷
আরও পড়ুন : পুলিশ আধিকারিক বাবার পথে পা রেখে মেয়েও একই পেশায়, দু’জনে মুখোমুখি অভিবাদন-পর্বে
জয়ন্তী- এই গুল্মও ঝোপঝাড়ে জন্মায় ৷ অনাদরে পড়ে থাকা এই পাতা সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে বহু সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়৷ সারতে না চাওয়া একঘেয়ে কাঁচা সর্দি, নাক বন্ধ এবং মাথা ভার হয়ে থাকার সমস্যায় কার্যকর এই পাতা৷ মধুমেহ নিয়্ন্ত্রণেও এই পাতার রস ব্যবহার কর হয়৷
শাঞ্চে- সাঞ্চি বা মালঞ্চ শাক নামেও পরিচিত ৷ জলা জায়গায় জন্মানো এই শাক পেট ঠান্ডা রাখে৷ পরিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে৷ অখিদে দূর করে খিদে বাড়ায়৷ প্রচুর ফাইবার থাকায় এই শাকের জন্য রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রিত হয়৷ আয়রন সমৃদ্ধ বলে রক্তাল্পতাও প্রতিরোধ করে৷
হিলঞ্চ-এই শাককে অনেকে ডাকেন হিঞ্চে বলেও৷ আয়ুর্বেদ মতে, এই শাক রক্তশোধক এবং ক্ষুধাবর্ধক৷ পাশাপাশি, পিত্ত সমস্যাতেও কার্যকর৷ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে এই শাক৷
পলতা- পটলের পাতাই পরিচিত পলতাপাতা নামে৷ খিদে ও হজমশক্তি দুই-ই বাড়ায় এই পাতার তিক্ত স্বাদ৷ নিয়মিত খেলে দূর হয় কোষ্ঠ্যকাঠিন্য৷
শৌলফ- পুরনো ক্ষত, জ্বর, চোখের সংক্রমণ উপশমে এই পাতার রস কার্যকর৷ মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে এবং বাচ্চদের পেটের গণ্ডগোল সারাতে এই শাক দেওয়া হয় আয়ুর্বেদ চিকিৎসায়৷
গুলঞ্চ- গুডুচি নামেও অনেকে ডাকেন গুলঞ্চ লতাকে৷ ঋতু পরিবর্তনে এই শাক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে৷ মধুমেহ, পেটের আলসার, গেঁটে বাত, জন্ডিস, যক্ষ্মা ও কোষ্ঠকাঠিন্যে এই শাক উপকারী৷
ভাটপাতা- লিভারের সমস্যা, চুল পড়া, হাঁপানি, সর্দিকাশি, চর্মোগ-সহ নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এই পাতা ব্যবহার করা হয়৷
শুষনি- চর্মরোগ, মাউথ আলসার, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা শুষনি শাক দেন৷ নিয়মিত এই শাক খেলে মানসিক চাপ জনিত যে কোনও সমস্যা ও মাথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ৷
এই ১৪ শাকের সম্মিলিত স্বাদ তিতকুটে৷ ঋতু পরিবর্তনের সময় এই স্বাদ গড়ে তোলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ এই ১৪ শাকের কথা বলেছেন নব্য স্মৃতিশাস্ত্রকার রঘুনন্দন৷ বাংলা পঞ্জিকাতেও ১৪ শাক বলতে উল্লেখ আছে এদের কথাই৷ তবে বিভিন্ন জায়গায় এই শাক নিয়ে মতভেদও আছে৷ অনেক সময়েই ১৪ শাকের তালিকায় ঢুকে পড়ে গিমে, কলমি এবং নটে শাকও৷ তবে এখন শহরাঞ্চলে তো বটেই, গ্রামেও এই শাকগুলি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ তাই হাতের কাছে যে শাক পাওয়া যায়, তাই দিয়েই বন্দি করা হয় আয়ুর্বেদের গুণাগুণ৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bhoot chaturdashi, Kali puja 2021