Ukraine War Crisis: ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমি দেশগুলোর অবস্থানের মাঝে পড়ে ভারত, কী হতে পারে আগামী দিনে?
- Published by:Suman Majumder
Last Updated:
Ukraine War Crisis: যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক কাজ করেছেন।
#নয়াদিল্লি: ইউক্রেনে (Ukraine) সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া (Russia)। দুই দেশের মধ্যে গত দুদিন ধরে যুদ্ধ জারি রয়েছে। তবে বরফও খানিকটা গলতে শুরু করেছে বলে খবর।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। তিনিও রাশিয়াকে সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানান। কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা পথে সবপক্ষকেই ফিরে আসার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন মোদি।
আরও পড়ুন- পেটের সমস্যায় ভুগছেন? স্টেলথ ওমিক্রনের সংক্রমণ নয় তো? জানুন কী বলছেন গবেষকরা
পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "রাশিয়া এবং ন্যাটো (NATO) গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য শুধুমাত্র সৎ এবং আন্তরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।" যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক কাজ করেছেন। যা পশ্চিমি দেশগুলিরও প্রশংসা আদায় করবে।
advertisement
advertisement
যদিও, উভয় পক্ষের প্রধান কৌশলগত অংশীদারদের সঙ্গে ভারত একটি কূটনৈতিক দ্বিধায় রয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির (Cabinet Committee on Security) বৈঠকে বসেন মোদি। তবে ভারত আগের দিনে মতো আজও রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UN Security Council) রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরোধিতা করে আনা নিন্দা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে অংশ নেয়নি।
ভারত, চিন (China) ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (UAE) ভোটদানে বিরত ছিল। আগের দিনও ভারত গোটা ঘটনায় দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার নিন্দা করা থেকে বিরত ছিল। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতির উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেল এবং ব্রিটিশ বিদেশ সচিব লিজ ট্রাসের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিলেন।
advertisement
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি দেশগুলির চাপের কারণে একটি কৌশলগত অবস্থান নেওয়া নয়াদিল্লির জন্য একটি পরীক্ষা। একদিকে নীতি এবং মূল্যবোধ এবং অন্যদিকে বাস্তববাদ এবং স্বার্থ।
আরও পড়ুন- আগামী ২০ বছরে গ্রিন এনার্জি সুপারপাওয়ারে পরিণত হবে দেশ: মুকেশ আম্বানি
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UN Security Council) রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করে আনা প্রস্তাবে (Resolution) দুই দেশই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থেকেছে।
advertisement
সংযুক্ত আরব আমিরশাহিও (UAE) ভোটদানে অনুপস্থিত ছিল। প্রায় ৬০টি দেশের সমর্থনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আলবেনিয়ার আনা প্রস্তাবিত প্রস্তাবটি পক্ষে ১৫ সদস্যের কাউন্টিলে ১১টি ভোট পড়েছে। প্রস্তাবের সমর্থনে পোল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, এস্টোনিয়া, লাক্সেমবার্গ, নিউজিল্যান্ডের মতো ১১টি দেশ ভোটদান করে।
নিন্দা প্রস্তাব কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও রাশিয়ার ভেটোতে (Veto) সেটি বাতিল হয়ে গিয়েছে। প্রস্তাবে বলা ছিল যে রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের কাজ করেছে। যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার লঙ্ঘন।
advertisement
রাশিয়াকে অবিলম্বে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করার এবং ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা থেকে তার সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়।
রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি (T S Tirumurti) বলেন, "দুঃখের বিষয় যে কূটনীতির পথ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের অবশ্যই এতে ফিরে যেতে হবে। আলোচনায় পার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তির একমাত্র উত্তর, যদিও এই মুহূর্তে তা ভয়ঙ্কর হতে পারে।"
advertisement
রাশিয়ার নাম না করে তিরুমূর্তি অবশ্য বলেছেন, "ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।" তবে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে তিনি যোগ করেছেন, "আমরা আহ্বান জানাই যে হিংসা এবং শত্রুতা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা করা হবে।"
এই সপ্তাহের শুরুতে, ভারত রাশিয়ার ডোনেস্ক (Donetsk) এবং লুহানস্কের (Luhansk) বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা করেনি। পশ্চিমারা এটিকে রাশিয়ার ক্রিয়াকলাপকে প্রশ্রয় দেওয়া হিসাবে দেখে। কারণ, চিনের ক্ষেত্রে যখন ভারত আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব ইস্যুটি উত্থাপন করে, তখন রাশিয়ার ক্ষেত্রে তা না করা ভাল চোখে দেখছে না পশ্চিমি দেশগুলি।
advertisement
উভয় পক্ষের অংশীদার: রাশিয়ার বাঁকানো পেশি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও নয়াদিল্লি মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলতে চায় না। ভারতের মোট আমদানিকৃত প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ৬০-৭০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে।
যদিও ভারত বিগত কয়েক বছরে আমেরিকা, ইজরায়েল, ফ্রান্স-সহ নানা দেশের থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি বাড়িয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক সাত দশকের। যদিও সম্পর্কটি কিছু ক্ষেত্রে স্থবির হয়ে পড়েছে এবং অন্যগুলিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে, এর সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভটি প্রতিরক্ষা।
ভারত রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার সামর্থ্য রাখে না, বিশেষ করে যখন ভারতীয় ও চিনা সেনারা লাদাখ (Ladakh) সীমান্তে একে অপরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক খেলোয়াড় হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে।
ভারতের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা গত দেড় বছরে তাদের চিনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে দেখা করেছেন। আর সেটা করেছেন রাশিয়াতেই। আফগানিস্তানে (Afghanitan) ভারতের স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রেও রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকার (USA) নেতৃত্বে পশ্চিমাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক আমেরিকান প্ল্যাটফর্ম চিন সীমান্তে অনুসন্ধান এবং নজরদারির জন্য ব্যবহার করছে ভারত। এছাড়াও চিন সীমান্তে ভারতের সেনাদের পরার জন্য বিশেষ শীতকালীন পোশাকও সংগ্রহ করা হয়েছে।
রাশিয়া-চিন সম্পর্ক: রাশিয়া ও চিনের সম্পর্ক নিয়েও চিন্তিত ভারত। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ (S-400) এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কেনার ভারতের লক্ষ্য চিন ও পাকিস্তানের হামলা প্রতিরোধ করা।
ভারতও সচেতন যে পশ্চিমা ও রাশিয়ার বৈরিতা মস্কোকে (Moscow) বেজিংয়ের দিকে আরও ঠেলে দেবে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া (Crimea) অধিগ্রহণের পর রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গি মস্কোকে বেজিংয়ের কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং ভারত সর্বদা মনে করে যে এটি পশ্চিমি দেশগুলিই এটির নেতৃত্ব দিয়েছে।
চিন-রাশিয়ান আধা-জোট সম্ভব হয়েছে ওয়াশিংটনের চিনা বিরোধী বক্তব্য, তেলের দামের পতন এবং চিনা সরঞ্জামের ওপর রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার কারণে। ফাইভ জি রোলআউট, হংকং এবং কোভিডের সংবেদনশীল বিষয়গুলিতে চিনের প্রতি রাশিয়ার মনোভাব নরম ছিল।
যদিও বেজিং এবং মস্কো সবসময় একে অপরের সিদ্ধান্তে সমর্থন দেয় না। ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় না চিন। পাল্টা দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের দাবির বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নেয় মস্কো।
ইউক্রেনে ভারতীয়রা: নয়াদিল্লির জন্য আরেকটি উদ্বেগ হল ইউক্রেনের ভারতীয় সম্প্রদায়, যাদের বেশিরভাগই ডাক্তারির পড়ুয়া। কিভের ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে যে প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয় নাগরিক এখনও ইউক্রেনে রয়েছেন।
মাত্র ৪ হাজার ভারতীয় গত কয়েক সপ্তাহে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি সীমান্ত দিয়ে এখনও আটক ভারতীয়দের বাড়ি ফেরাতে পদক্ষেপ নিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। আজই কয়েকশো ভারতীয় এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে মুম্বইয়ে নামবেন।
দেশের সব লেটেস্ট খবর ( National News in Bengali ) এবং বিদেশের সব খবর ( World News in Bengali ) পান নিউজ 18 বাংলায় ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং টপ হেডলাইন নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ ডাউনলোড করুন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস-এ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে ক্লিক করুন এখানে ৷
Location :
First Published :
February 26, 2022 5:32 PM IST