Russia Ukraine War: Explained: শান্তি আলোচনা একমাত্র পথ, দখল করা জমি ছাড়তে নারাজ রাশিয়া! কেন?
- Published by:Suman Biswas
Last Updated:
Russia Ukraine War: আপাতত দেখে নেওয়া যাক রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কেন শান্তিচুক্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
#নয়াদিল্লি: দীর্ঘ এক মাস হতে চলল। তবুও চলছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর ক্রমাগত আক্রমণে বিধ্বস্ত গোটা ইউক্রেন। মুহুর্মুহু গুলি আর বোমা বর্ষণে ইউক্রেনের একাধিক জায়গা বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের অবসানে ইতিমধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেনের কূটনীতিকরা আলোচনায় বসেছে বার বার। গোটা বিশ্বের একাধিক দেশ যখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে তার ফলাফলকে গুরুত্ব না দিয়ে ইউক্রেনের প্রতি তাদের আক্রমণ আরও তীব্র করেছে রাশিয়া। তবে রাশিয়াকে হাতে নয়, পাতে মারতে ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির পক্ষ থেকে সরাসরি সামরিক অভিযানের বদলে মহা শক্তিধর রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ভাবে চাপে ফেলতেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার পরেও কাজ না হওয়ায় দিন কয়েক আগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ইউক্রেনকে সব রকম ভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ন্যাটো। পাশাপাশি ইতিমধ্যেই রাশিয়াকে পারমানবিক যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। কিন্তু কোনও ওষুধেই কুপোকাত করা যাচ্ছে না রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে (Vladimir Putin)। তাহলে রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে না কি শান্তি আলোচনায় অবসান হবে যুদ্ধের? সে উত্তর অবশ্য মিলবে ভবিষ্যতে। আপাতত দেখে নেওয়া যাক রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কেন শান্তিচুক্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
১. অঞ্চলগত সমস্যা :
সাম্প্রতিক যুদ্ধের অবসানে রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে এখনও পর্যন্ত যে শান্তি আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে তার মধ্যে এটি ওই আলোচনার সবচেয়ে কঠিন অংশ। তবে বার কয়েক আলোচনার পরও এখনও পর্যন্ত দুই দেশের কোনও পক্ষের তরফ থেকেই অঞ্চল গত সমস্যা বা দখলদারি নিয়ে কোনও প্রকার পক্ষই আপোস করা তো দূর অস্ত, বদলে আলোচনায় এর কোনও চিহ্ন মেলেনি। পরিবর্তে আলোচনা সভায় বার বার অঞ্চল গত সমস্যার প্রসঙ্গ উঠে এলে তাকে দুই দেশের পক্ষ থেকে অঞ্চলগত সমস্যাগুলিকে ক্রমাগত পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন কূটনীতিকরা।
advertisement
যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে তাদের অধিভুক্ত করে পাশাপাশি চলতি বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব ইউক্রেনের দুটি রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এমনকী যুদ্ধের একেবারে গোড়া থেকে রাশিয়ান সেনাবাহিনী ক্রিমিয়ার উত্তরে অর্থাৎ ইউক্রেনের দক্ষিণ প্রান্তের বিদ্রোহী অঞ্চলগুলি সহ এবং ইউক্রেনের রাজধানী কিভের পূর্ব ও পশ্চিমের অঞ্চল জুড়ে একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
advertisement
advertisement
তবে রাশিয়ান সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মোট এলাকার পরিমাণ ১ লক্ষ ৭০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। যা তিউনিসিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরে অবস্থিত ডাকোটা রাজ্যের আয়তনের সমতুল্য বিস্তীর্ণ এলাকা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
advertisement
অন্য দিকে, রাশিয়ার এই দাবিকে নস্যাৎ করে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা কখনই ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলের স্বাধীনতা বা রাশিয়ার দখল করা বিশাল আয়তনের অতিরিক্ত ভূখণ্ডকে স্বীকৃতি দেবে না। এমনকী কিভ বার বার ক্রিমিয়া সহ ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে তারা তাদের দেশের মধ্যে যুক্ত থাকা ভূখণ্ডের অধিভুক্তি গ্রহণ করবে না বা লুহানস্ক এবং দোনেস্কের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেবে না।
advertisement
তবে ইউক্রেন তাদের এই দাবি না মানলে অর্থাৎ আত্মসমর্পণ না করলে রাশিয়া তাদের আক্রমণেই অনড় থাকবে বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রাশিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে।
২.ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা দৃষ্টিভঙ্গি
ইতিমধ্যেই যুদ্ধের আবহে ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে রাশিয়া। কারণ আজ থেকে ২২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯০ সালে আমেরিকা, ব্রিটেন, তুরস্ক, ফ্রান্স এবং জার্মানির নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে একটি নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার জন্য লিখিত প্রস্তাব দেয় ইউক্রেন।
advertisement
তবে সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের মতামতের জন্য প্রয়োজন গণভোটের। ইতিমধ্যেই কিভের পক্ষ থেকে ওই সকল দেশগুলিকে জানানো হয়েছে, ইউক্রেন থেকে রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করলে তবেই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে। সাম্প্রতিক যুদ্ধের আবহে তুরস্কের মাটিতে শান্তি আলোচনার পর রাশিয়া কিয়েভের চারপাশে সামরিক অভিযান স্থিমিত করতে সম্মত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
advertisement
ওই শান্তি আলোচনার পর রাশিয়ার কূটনীতিক মেডিনস্কি বলেছেন যে, ইউক্রেন ইতিমধ্যেই মস্কোর মূল দাবিগুলির সঙ্গে একমত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। এমনকী ওই আলোচনা সভায় ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেন জোটের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করা নিয়েও সম্মতি জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার। এমনকী ইউক্রেন কোনও ভাবেই পারমাণবিক বা গণবিধ্বংসী অন্যান্য অস্ত্র অর্জনের যে কোনও প্রচেষ্টা করতে পারবে না। পাশাপাশি কোনও বিদেশি সৈন্যদের আতিথ্য গ্রহণ না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনকে দিতে হবে। তবেই ইউক্রেন থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে রাশিয়া। নচেৎ তা কোনও মতেই সম্ভব নয় বলে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ রাশিয়া মনে করে ইউক্রেন এই শর্ত মানলে তবেই ন্যাটোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হবে ইউক্রেনের।
তবে ওই বছরই অর্থাৎ ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, ইউক্রেনের সংসদ রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ঘোষণায় স্থায়ীভাবে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করেছিল। এমনকী সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনকে সামনে রেখে ন্যাটোর ক্রমাগত অগ্রসর মনোভাব রাশিয়ার কাছে মাথাব্যথার কারণ। ন্যাটোর এই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করতে বদ্ধপরিকর রাশিয়া। এবিষয়ে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দাবি করেন ইউক্রেন সরকারের কাছে। ওই সময় অবশ্য রাশিয়ার দাবি মানলেও কোনও লিখিত প্রতিশ্রুতি নাদিয়ে শুধুমাত্র মৌখিক ভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ন্যাটোতে তড়িঘড়ি যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই কারণ ন্যাটোর বাকি সদস্যরা যে ইউক্রেনের সদস্য হওয়া মেনে নেবেনা তাও তিনি খোলসা করেন।
এ ছাড়াও রাশিয়া পক্ষ থেকে একাধিক বার ইউক্রেনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকী ১৯৯৪ সালের হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ব্রিটেনের তরফ থেকে পারমাণবিক অস্ত্রের অপসারণ সংক্রান্ত চুক্তিতে আনুগত্যের বিনিময়ে ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।
৩. ইউক্রেনে বসবাসকারী রাশিয়ানদের অধিকার:
ইউক্রেনে রাশিয়ান ভাষা এবং রাশিয়ান-ভাষী লোকদের অবস্থা মস্কোর জন্য একটি সমস্যা। ২০১৯ সালে ইউক্রেন সরকার একটি আইন পাস করে। ওই আইনে ইউক্রেনীয় ভাষাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই আইনের গেরোয় পড়ে ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে প্রদান করা সব ধরনের সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন রুশভাষী মানুষরা। ইউক্রেন সরকারের এই নীতিকে পক্ষপাতিত্ব বলে আখ্যা দিয়েছে রাশিয়া সরকার।
৪. ডি-নাৎজিফিকেশন অর্থাৎ ইউক্রেনের নাৎজি বাহিনীর ভূমিকা:
এ বিষয়ে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন সরকার তাদের দেশে রুশ-ভাষী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা সংগঠিত করার অনুমতি দিয়েছে। এর জন্য ইউক্রেন সরকার সে দেশের নাৎজি বাহিনীর মতো গোষ্ঠীগুলিকে উদ্বুদ্ধ করছে।
এই ঘটনার উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের অংশ আজভ ব্যাটালিয়নকে মস্কো একটি নাজি সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত করেছে যেটি রাশিয়ান বেসামরিক নাগরিকদের সন্ত্রাস করেছে এবং যুদ্ধাপরাধ করেছে।
এমনকী এই বাহিনীর সদস্যরা পরোক্ষে ইউক্রেন সরকারের অনুমতি নিয়ে ২০১৪ সালে রাশিয়ান-সমর্থিত বিদ্রোহী অঞ্চলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। ইউক্রেনের মাটিতে থাকা এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতারা চরম ডানপন্থী এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী এবং ইহুদি-বিরোধী বলে জানানো হয়েছে রাশিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে।
তবে পুতিনের এই দাবিকে নস্যাৎ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পাল্টা বলেন, ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নাৎজি বাহিনী গঠন করা হয়নি। পাশাপাশি তাঁর আরও দাবি, রাশিয়ান সেনাবাহিনী বরঞ্চ ইউক্রেনের একাধিক জায়গা দখল করে নাৎজি বাহিনীর মতো আচরণ করছে ইউক্রেনীয়দের ওপর।
তবে সমস্যা যাই থাকুক, তা কি শান্তি আলোচনায় শেষ পর্যন্ত সমাধান হবে? না কি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতেই থাকবে তার উত্তর মিলবে ভবিষ্যতে। কিন্তু যুদ্ধ থামানোর পাশাপাশি শান্তি ফেরানোর লক্ষ্যে এখনও পর্যন্ত বার কয়েক আলোচনার টেবিলে বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন দু'দেশের প্রতিনিধিরা। এমনকী রাশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই রাশিয়ার দাবিগুলি মানতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। তবে এই যুদ্ধের অবসানে কূটনীতিকদের বদলে দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভলোদিমির জেলেনস্কির (Volodymyr Zelenskyy) সরাসরি বৈঠককেই শান্তির একমাত্র পথ বলে মোট দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
Location :
First Published :
April 04, 2022 6:28 PM IST