এমনকি, নিয়ম মেনে এখনও হাত চিরে রক্ত দিয়ে মায়ের পুজো সম্পূর্ণ হয়। এখনও এলাকায় গৃহস্থের বাড়িতে বা পুজো মণ্ডপ গুলিতে পুজোর আগে মা কেঁদুয়াবুড়িকে পুজো দিয়ে তারপর পুজো শুরু হয়। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও নানা জনশ্রুতি। ষোড়শ শতকে গোপিবল্লভপুরের এই এলাকাটি চিয়ারা পরগনার অধীনে ছিল। আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে পুরীর ক্ষত্রিয় রাজকুমার বলিপালদেব রাজ্যচুত হয়ে ভাগ্যক্রমে এই এলাকায় এসে পৌঁছান।
advertisement
এই রাজ্যে তখন কেন্দ গাছে ভরা জঙ্গল। ক্ষুধার্ত রাজকুমার তখন একটি নিমগাছের তলায় বসে বিশ্রাম নেন। তখন এক উপজাতি কিশোরীর রূপ ধরে দেবী মা রাজকুমার বলিপালদেবকে কেঁদ ফল খেতে দেন এবং পরে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, ওই নিম গাছের নিচে কুণ্ডে দেবী অধিষ্ঠিতা। দেবী পুজো চান। তবে দেবী শর্তও দেন যে, কোন মন্দিরে নয় উন্মুক্ত আকাশের নীচে তিনি পুজো চান। তিনি আরও বলেন, পুজো শুধু মাত্র নিম্নবর্নের বাগদিরাই করবেন। তারপর দেবীমার কৃপায় পরাক্রমী রাজা হন বলিপালদেব।
আরও পড়ুন: ৪৫০ বছরের পুরোনো দুর্গাপুজো! বানেশ্বর শিব মন্দির-এর পুজোর গল্প অবাক করবে
তাঁর নাম থেকেই এই গ্রামের নাম হয় বালিপাল। আর কেঁদ গাছের জঙ্গলে সেই সময় কাল থেকেই মা একই রকম ভাবে পূজিতা হয়ে আসছেন। দুর্গা পূজার সময় এই মন্দিরে বিশেষ ভাবে মা কেঁদুয়া বুড়িকেও পূজো করা হয়। এখনও সেই বাগদি সম্প্রদায়ের পৌরাণিক আচার বিধি মেনে পুজো করে চলেছেন বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষেরা। প্রায় ৩৫ টা গ্রামের মানুষেরা এই মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। তাঁরা নিজেদের মনের কথা মায়ের কাছে স্মরণ করেন। যে কোন শুভ কাজের আগে মায়ের থানে পুজো দেন। তাঁরা মায়ের কাছে মানসিকও করেন। এখনও সেই আচার, নিয়ম মেনে মায়ের থানে প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার পুজো হয়। আর এভাবেই বালিপাল গ্রামবাসীবৃন্দ প্রায় ৬৮ বছর ধরে মা দুর্গার আচার বিধি মেনে পুজো করে চলেছেন।
Partha Mukherjee