পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের জঙ্গল-ঘেরা গ্রামগুলিতে যখন শরতের আগমনে কাশফুল শুভ্র হাসিতে জানান দিচ্ছে ‘মা আসছেন’, ঠিক তখনই এই নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাঠে। তারা কাশফুল ও বিশেষ ধরনের ঘাস সংগ্রহ করেন মাঠ থেকে, আর সেই কাশফুল ও ঘাস থেকেই তৈরি হয় তাদের পরিশ্রমের ফল ঝাঁটা। এই ঝাঁটাই হয়ে ওঠে তাদের সংসার চালানোর একটি বড় ভরসা। সারা বছর ব্যবহারের জন্যও যেমন রাখেন, তেমনই সেই ঝাঁটা বিক্রিও করেন হাটে-বাজারে।জানকী বাস্কে বলেন, \”পরিশ্রম আছে এই কাজে, তবে রোজগারও হয় বিক্রি করে। আর বিক্রি না হলে তো ঘরের কাজেই লাগাবে\”
advertisement
এই সংগ্রামের পথ মোটেও সহজ নয় তাদের কাছে। ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকে বিষধর সাপ, অসংখ্য পোকামাকড়, আবার থাকে চড়াই-উতরাই পথের ক্লান্তি। তবু থেমে যান না তারা। কখনও পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর আশায়, কখনও বা সামান্য কিছু রোজগারের আশায়, তারা কাজ করে চলেন। বনের বুকে কাটা ঘাস, কাঁধে বয়ে আনা ঝাঁপি ভর্তি কাশফুল, সবই হয়ে ওঠে জীবনের মূলধন। কারও চোখে সন্তানদের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন, কারও চোখে স্বনির্ভর হবার দৃঢ়তা। সেই স্বপ্ন আর সাহসকে এক করে তারা গড়ে তোলেন নিজেদের জীবনের ভিত। মূলত আদিবাসী মহিলারাই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত।
তাদের নিষ্ঠা, সাহস ও পরিশ্রম দেখে মনে হয়, এই নারীরাই তো আসল দুর্গা, যারা নিজের জীবনের ভয়কে জয় করে এগিয়ে চলেছেন কর্মপথে। তাদের শ্রম, তাদের জীবন যেন সাদা কাশফুলের মতই পবিত্র ও সৌন্দর্যময়। তাই যখন দুর্গাপুজোয় চারদিকে ‘জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি ওঠে, তখন সেই গর্জনের মধ্যেই যেন শোনা যায় এই সংগ্রামী নারীদের নিঃশব্দ বিজয়গান।