মুর্শিদাবাদের সুতি ১ ব্লকে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ যাতে ‘পথশ্রী’ প্রকল্পের রাস্তা ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারেন সেই উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার প্রায় দেড় বছর আগে সুতি-১ ব্লকের হারুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত পারাইপুর গ্রামে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য ৩৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিল। তবে স্থানীয় বিডিও অফিস থেকে রাস্তা নির্মাণের কাজের ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ পাওয়ার পর আজ পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ওই গ্রামে রাস্তা তৈরীর কাজ শুরু করেনি বলে অভিযোগ। তার ফলে আজও প্রচন্ড অসুবিধার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা।
advertisement
আরও পড়ুন: প্যাকেট দুধের ভিড়ে হারাচ্ছে ৮০ বছরের ঐতিহ্য! সঙ্কটে জলপাইগুড়ির বউবাজারের ‘দুধহাটি’
সম্প্রতি সমাজ মাধ্যমের ভাইরাল হওয়া ওই গ্রামের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গ্রামের রাস্তা কাদায় ভর্তি থাকা অবস্থায় গর্ভবতী এক মহিলাকে তার পরিবারের সদস্যরা খাটিয়ায় চাপিয়ে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পারাইপুর গ্রামে দক্ষিণপাড়া এবং পূর্বপাড়ার মধ্যে ওই রাস্তা তৈরির জন্য এটি সংস্থাকে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ দেওয়া হয়। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছরে ওই সংস্থা গ্রামে এক মিটার রাস্তাও তৈরি করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: স্কুলে ক্লাস চলছিল পুরোদস্তুর…আচমকা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল গোটা ঘরের ছাদ! সাংঘাতিক কাণ্ড
আর তার ফলে অল্প বৃষ্টিতে গ্রামের রাস্তা এক হাঁটু কাদায় ডুবে থাকে। গ্রামের কোনও মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখানে অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনও গাড়ি ঢুকতে পারে না। ফলে অনেক সময় গ্রামের লোকজন খাটিয়া করে পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। গ্রামবাসীরা জানান, ওই এলাকায় একটি স্কুল ছাড়াও ছোটখাটো প্রচুর দোকান রয়েছে। রাস্তা খারাপ থাকার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্কুলে যেতে গেলেও এক হাঁটু কাদা পার হয়ে যেতে হয়।
বেলাল হোসেন নামে এক গ্রামবাসী বলেন , ‘গ্রামের রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ আমাদেরকে নিজেদের মোটরসাইকেল অন্যের বাড়িতে রেখে এক কিলোমিটার রাস্তা কাঁদা রাস্তা হেঁটে আসতে হয়। কারণ ওই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা তৈরী হয়ে গেলেই আমরা কাদা থেকে মুক্তি পাবো। ‘
রাস্তার খারাপ অবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন স্থানীয় আশা কর্মী সাবিনা খাতুন। তিনি বলেন, ‘ সম্প্রতি শিউলী খাতুন নামে এক গর্ভবতী মহিলা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য খাটিয়া করে বাড়ির লোক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে এসেছিল। গ্রামে পাকা রাস্তা না থাকার জন্য হঠাৎ করে প্রসব যন্ত্রণা উঠলে অনেক সময় প্রসূতি মাকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না, বাড়িতেই প্রসব হয়ে যায়।’
অন্যদিকে ‘পাথশ্রী’ প্রকল্পে ওই রাস্তার ‘ ওয়ার্ক অর্ডার’ হয়ে যাওয়ার পরও যে কাজ শুরু হয়নি তা স্বীকার করে নিয়েছেন সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘ ওই রাস্তার ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ বার হওয়ার পর আমি কাজ শুরুর শিলান্যাস করেছিলাম। কিন্তু তারপরে জানতে পেরেছি দায়িত্বপ্রাপ্ত। ঠিকাদার সংস্থা রাস্তার কাজ করেনি। বিডিও কেন ওই ঠিকাদার সংস্থাকে শোকজ করেনি তা আমি বলতে পারব না।’
যদি সুতি-১ ব্লকের বিডিও অরূপ কুমার সাহা বলেন, ‘রাস্তা তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা সময়মতো কাজ না করায় তাকে দু’বার শোকজ করা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় ‘হিউম পাইপ’ পড়েছিল। তাই রাস্তা নির্মাণ করার মত অবস্থা ওই এলাকায় ছিল না। সম্প্রতি সমস্ত বাঁধা সরানো হয়েছে এবং রাস্তা নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এলাকায় ফেলা হয়েছে। দ্রুত ওই এলাকায় রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে।’