প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী এই গ্রামে কখনও দুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমা আনা হয় না। কারণ এখানে দেবী যোগাদ্যা নিজেই উপস্থিত আছেন। ক্ষীরগ্রামে দুর্গাপুজোয় মূর্তি নয়, পুজো হয় কলাবউ বা নবপত্রিকার। গ্রামে প্রচলিত নিয়মে দুর্গাপুজোর প্রতিটি আচার-অনুষ্ঠান পালিত হলেও মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণের সাহস বা প্রয়াস কেউ কোনও দিন দেখান নি। বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই প্রথা আজও অটুট।
advertisement
আরও পড়ুন : চায়ের ব্যবসায়ী হয়েও আজ কিংবদন্তি! জীবিত মানুষ, অথচ সরকারি নথিতে তাঁর নামেই রাস্তা! আসল ঘটনা জানুন
যোগাদ্যা মন্দির কমিটির সদস্য আশীষ চৌধুরী বলেন, “ডান পায়ের বুড়ো আঙুল এখানে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং সেই কারণেই এটা একটা সতীপীঠ। এখানে দেবী যোগাদ্যা দশভূজা দূর্গা মূর্তি রূপে পূজিত হন। এই ক্ষীরগ্রামে যেহুতু মা রয়েছেন, সেই কারণেই এখানে কোনও দূর্গা মূর্তি আনতে নেই। কলাবউ নিয়েই এখানে পুজো হয়। নির্দিষ্ট মন্ত্র মেনে তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে এই পুজো সমাপ্ত করা হয়।” দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে গ্রামে উৎসবের আবহ তৈরি হয় অন্যভাবে।
আরও পড়ুন : মূর্তি তৈরিতে অনেকেই ‘ওস্তাদ’, তবু চোখ আঁকার জন্য অপেক্ষা শুধু একজনের! শান্তিপুরের এই শিল্পীর গল্প জানুন
মহাসপ্তমীর সকালে ক্ষীরদীঘির জলে নবপত্রিকার স্নান করানো হয়। বহু মানুষ সেই সময় ভিড় জমান। যতগুলি কলাবউ পুজো হয়, সব ক’টিকেই স্নান করানো হয় নিয়মমাফিক। গ্রামজুড়ে মোট পাঁচটি বারোয়ারি কলাবউ পুজো হয়। এছাড়া যোগাদ্যা মায়ের আদি মন্দির ও ক্ষীরদীঘির মন্দির মিলিয়ে মোট সাত জায়গায় পুজো অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয়া দুর্গাপুজোর সব আচার পালিত হয় এখানে। মহাসপ্তমীর নবপত্রিকা স্নান, মহাঅষ্টমীর সন্ধিপুজো, মহানবমীর মহিষ বলি, এমনকি বিজয়া দশমী সবই হয় পরম্পরা মেনে। তাই মৃন্ময়ী প্রতিমা না থাকলেও দুর্গাপুজোর আনন্দে কোনও ঘাটতি নেই ক্ষীরগ্রামে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
উৎসবের দিনগুলি গ্রামের প্রতিটি কোণ আলো, ঢাক আর আনন্দে ভরে ওঠে। মন্দিরের পূজারি প্রকাশ চক্রবর্তী বলেন, “প্রতিমা পুজো হয়না বলে আমাদের কোনও আক্ষেপ নেই। আমরা খুবই আনন্দের সঙ্গেই পুজো কাটাই। একটা দুর্গাপুজোতে যা খরচ হয়, আমাদেরও একই খরচ হয়। পুজোর কয়েকটা দিন ভালই কাটে।” তবে আনন্দ উৎসবের পাশাপাশি এখানকার মানুষদের মনে সবসময় ভাসে প্রাচীন প্রথা আর আদি ঐতিহ্যের গর্ব। কারণ বহু বছরের পুরনো বিশ্বাস এখনও বজায় রেখে চলেছে ক্ষীরগ্রাম। তাই বর্ণময় থিমের পুজোর ভিড়ের মাঝেও ক্ষীরগ্রাম যেন এক অনন্য ব্যতিক্রম।