রেডিও কাকার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সোনালি দিনের স্মৃতি। তিনি দেখেছেন সেই সময়, যখন মহালয়ার আগে তাঁর দোকানে জমা পড়ত শয়ে শয়ে রেডিও। রাত জেগে মেরামত চলত, যাতে ভোরের আলো ফুটতেই প্রতিটি ঘরে প্রতিধ্বনিত হয় মহালয়ার সুর। সে সময় রেডিও শুধু যন্ত্র নয়, ছিল ঘরের প্রাণ। সুরাত আলি শেখ বলেন, ‘আগে মহালয়ার একমাস আগে থেকে কাজ নেওয়া বন্ধ করে দিতাম। রাতে ঠিকভাবে ঘুম হত না, ভালই চাপ থাকতো। তবে এখন আগের মতো আর চাপ না থাকলেও নতুন করে রেডিওর চাহিদা কিন্তু বাড়ছে’।
advertisement
আজ সময় বদলেছে। মোবাইল আর ইন্টারনেটের ভিড়ে রেডিওর কদর অনেকটাই কমেছে। তবুও মহালয়ার সময় যেন আবার জেগে ওঠে সেই পুরোনো আবেগ। এক কোণে পড়ে থাকা রেডিওগুলো হঠাৎ করেই প্রাণ ফিরে পায় রেডিও কাকার হাতে। পুরোনো ট্রানজিস্টর থেকে শুরু করে আধুনিক রেডিও সবই সমান দক্ষতায় সারিয়ে তোলেন তিনি। কাটোয়া রেডিও দোকানের বর্তমান কর্ণধর পার্থ মণ্ডল বলেন, ‘উনি এককথায় রেডিওর পোকা, রেডিও সারাতে ওস্তাদ। কাটোয়াতে সবাই রেডিও কাকা নামেই চেনেন’।
বয়সের ভার বাড়লেও পেশার প্রতি নিষ্ঠা একটুও কমেনি তাঁর। এখনও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন শুধু তাঁর হাতের ছোঁয়া পাওয়ার আশায়। কাটোয়ার সেই ছোট্ট দোকানে প্রতিদিন বসে থাকেন সুরাত আলি। নিঃশব্দে রেডিও সারান, আর বাঁচিয়ে রাখেন এক টুকরো ইতিহাস, এক টুকরো আবেগ। মহালয়ার আগমনী হাওয়া বইলেই যেন আলাদা আলো ছড়িয়ে পড়ে রেডিও কাকার দোকানে। তখন তিনি শুধু একজন মিস্ত্রি নন, হয়ে ওঠেন বাঙালির স্মৃতিরক্ষক, যিনি ধরে রেখেছেন সেই অনন্য অনুভূতি, রেডিওয় মহালয়া শোনার আবেগ।