পিতা দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পুলিশ অফিসার। মাতা হেমলতা দেবী এক সাধারণ গৃহবধূ। পড়াশোনায় শুরু থেকেই মেধাবী গুণেন্দ্রনাথ ১৮৯৯ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এলএমএস ডিগ্রি লাভ করেন। চিকিৎসকের পেশায় প্রতিষ্ঠিত হলেও তাঁর মন পড়ে থাকত দেশের মুক্তির স্বপ্নে। কাটোয়া শহরের বারোয়ারিতলায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন নিজের বাড়ি। যা আজও দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীনতার নীরব সাক্ষী হয়ে। বাংলার বহু বিপ্লবী সংগঠন ও বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
advertisement
আরও পড়ুন : যত খুশি মিষ্টি খান, পকেটে চাপ পড়বে না! দাম জানলেই ছুটবেন
১৯২১ সালের গান্ধিজির অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে আইন অমান্য আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তাঁর অদম্য উপস্থিতি মানুষকে উদ্দীপ্ত করত। ড. গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এর নাতি রঘুনাথ মুখার্জী বলেন, “বহুবার জেল খেটেছেন দাদু এবং কারাগারে তিনি গঙ্গাজল দিয়ে নিজের হাতে রান্না করে খেতেন। প্রতিদিন ভোর বেলায় গঙ্গায় স্নান করা এবং বাড়ির ঠাকুরের পুজো করা তাঁর নিত্য অভ্যাস ছিল। তাঁর বাড়ি উদারভাবে খোলা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য।”
তিনি শুধু কথা নয়, কাজে বিশ্বাস করতেন। জানা যায়, তিনি নিজের হাতে কাটা সুতোয় বোনা খাদি বস্ত্র পরতেন এবং সারা কাটোয়া মহকুমায় খাদির প্রচার চালাতেন। স্বাধীনতার পতাকা উঁচিয়ে তিনি সাধারণ মানুষকে জাগিয়ে তুলতেন। আর এই কাজের জন্য একাধিকবার তাঁকে কারাবরণও করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন : অবসর নেওয়ার পরেও এই সেনাকর্মী যা করছেন, জানলে স্যালুট করবেন
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গেও তাঁর সরাসরি যোগাযোগ ছিল। দেশের জন্য মৃত্যুকেও যিনি তুচ্ছ করেছেন, তাঁর স্মৃতি আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁর নাতি রঘুনাথ বাবু। যদিও দাদুকে তিনি দেখেননি, তবুও দাদুর নাম শুনলেই তাঁর চোখে গর্বের জল ধরা পড়ে। প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে বাড়ির ছাদে পতাকা উত্তোলন করে তিনি দাদুর স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখেন। রঘুনাথ বাবু আরও বলেন, “দাদুকে নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে দাদুর জন্য এখনও গর্ব অনুভব করি।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
১৯৫৫ সালের ১০ আগস্ট, এই অদম্য সংগ্রামী চিরবিদায় নিলেও, কাটোয়ার মাটি আজও তাঁর পদচিহ্ন আগলে রেখেছে। ড. গুণেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, যাঁর জীবন ছিল দেশপ্রেমের প্রতীক। যাঁর গল্প শুনলেই রক্তে স্বাধীনতার আগুন জ্বলে ওঠে।