সংস্কার ও সংরক্ষণের অভাবে একদা বাংলা তথা ভারতবর্ষে ইতিহাস কার্যত বিলুপ্তির পথে৷ বর্তমানে এই রাজনগর ও তার কাহিনী সমূহ ধূলিময় ইতিহাসের পাতায় বন্দি মাত্র। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে রাজ বংশের সদস্যদের দাবি, ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রশাসন রাজনগরের রাজবাড়ি, স্নানাগার, মতিচূড়া মসজিদ, কালীদহ দিঘি, বারুদঘর, হাতিশালা প্রভৃতি সংস্কার করুক। যা একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রও হতে পারে। ইতিহাস থেকে জানা গিয়েছে, এই রাজনগরের প্রাচীন নাম ছিল 'লক্ষ্ণৌর'।
advertisement
আরও পড়ুনঃ ব্যাপক উত্তাল সমুদ্র, বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে পাড়ে, দিঘায় তীব্র জলোচ্ছ্বাস, ভয়ঙ্কর ভিডিও
রাজা বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষ্মন সেনের নামানুসারে। তবে এই নামটি বল্লাল সেন রেখেছিলেন? নাকি লক্ষ্মণ সেন? তা নিয়ে ইতিহাসে দ্বিমত রয়েছে। এই 'লক্ষ্ণৌর' নামটি পরবর্তীতে লোকমুখে অপভ্রংশ হতে হতে হয় 'লক্ষর'। আরও পরে 'নগর' নাম হয়৷ এরপর একাধিক রাজাদের গড় হওয়ায় এই স্থানের নাম হয় 'রাজনগর'। সেন বংশের সময়কালে বীর রাজাদের দখলে ছিল এই রাজনগর৷
বখতিয়ার খিলজি থেকে শুরু করে গিয়াসউদ্দিন বলবন পর্যন্ত মুসলমান শাসকেরা বার বার বাংলা আক্রমণ করেছে। কিন্তু, বীররাজার শাসনকালে রাজনগরের চতুর্দিকে থাকা ১২ গড় ভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। একাংশ ইতিহাসবিদের মতে, এই বীর রাজার নামানুসারেই 'বীরভূম' নামকরণ হয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ আজ ৫ জেলায় তাপপ্রবাহে লাল সর্তকতা, শুক্রবার থেকে কমবে তাপমাত্রা, বৃষ্টি নামবে জেলায় জেলায়
অনুমানিক, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রাজনগরে শুরু হয় মুসলিম শাসকদের রাজত্ব৷ উল্লেখ্য, পরাক্রমশালী বীররাজা যখন রাজনগরের সিংহাসনে বিরাজমান তখন দুই পাঠান সেনা নায়ক আসাদুল্লাহ খাঁ ও জোনেদ খান রাজনগরে আসেন৷ নিজ নিজ পরাক্রমের পরিচয় দিয়ে রাজার বিশ্বাস অর্জন করেন তারা৷ পরে রানির সহযোগিতায় জোনেদ খান বীররাজা ও আসাদুল্লাহ খাঁকে হত্যা করে। রাজনগরে শুরু হয় পাঠানদের রাজত্ব৷
১৭৫৭ খ্রীস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজদৌল্লা পরাজিত হওয়ায় বঙ্গের রাজারা এক এক করে ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ শুরু করেন। ব্রিটিশদের রাজস্ব দেওয়া শুরু করেন বাংলার রাজা-জমিদারেরা৷ কিন্তু, এই রাজস্ব দেওয়ার প্রতিবাদ করেছিলেন মীরজাফর পুত্র মীরকাশিম৷ রাজনগর ও হেতমপুরের রাজাদের সঙ্গে বীরভূমের কড়িধ্যায় ইংরেজ সেনাবাহিনীর যুদ্ধ হয়৷ ইংরেজ গোলাবারুদের সামনে পরাস্ত হন দুই রাজাই৷ এখান থেকেই ইংরেজদের গর হয়ে ওঠে এই রাজনগর৷
ইতিহাসে আরও উল্লেখ আছে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৮৫৫ 'সাঁওতাল বিদ্রোহী' ঘোষণা হয়। সেই বিদ্রোহেরও অন্যতম গড় ছিল এই রাজনগর। তাই রাজনগর রাজবাড়ির কোনে কালীদহ দিঘির পাড়ে গাব গাছের নীচে সাঁওতাল নেতা মংলু মাঝি-সহ বহু বিদ্রোহীদের ফাঁসি দেয় ব্রিটিশ সরকার৷
Subhadip Pal