সেই সময়ই তাঁরা সমুদ্রের রুদ্ররোষ থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় আশ্বিন মাসেই অকালেই মা গঙ্গার আরাধনা শুরু করেন। বাঁকিপুটের উপকূলে বালির চাতালে ছোট্ট একটি মণ্ডপে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হয় ‘গঙ্গোৎসব’। যা আজও গ্রামের প্রধান উৎসব হিসেবে আয়োজন করে আসছে সমুদ্র তীরের বাসিন্দারা।
advertisement
এখন এটি শুধু পুজো নয়, এক ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সাধারণত প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসেই উপকূল মৎস্যজীবীরা গঙ্গোৎসব পালন করেন। তবে এখানে আয়োজনটি একটু অন্যরকম, কারণ এটি অকাল গঙ্গোৎসব। আশ্বিন মাসেই শুরু হয়েছে মা গঙ্গার পুজো ও মেলা। ১৯৬০-এর আশ্বিন এর মত এবারও একের পর এক নিম্নচাপ ও প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উপকূল অঞ্চল।
তাই আবারও সমুদ্রবাঁধ ভাঙনের আশঙ্কায়, মা গঙ্গার কৃপা কামনায় অকালেই শুরু হয়েছে পুজো। বাঁকিপুটের সমুদ্রতীরে বোল্ডারের চাতালে তৈরি করা হয়েছে হয়েছে মনোরম প্যান্ডেল ও মা গঙ্গার প্রতিমা। প্রতিদিনই ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের।
পুজোর পাশাপাশি সাতদিন ধরে চলছে মেলা, লোকসংগীত, যাত্রাপালা, ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। হরেক রকম দোকানপাট, খেলনা, মিষ্টি থেকে শুরু করে বিনোদনের পসরা, সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বাকিপুট সমুদ্র তীরে।
এ বছর তাদের গঙ্গোৎসবের ৬৫তম বর্ষপূর্তি। দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই উৎসব আজও সেই প্রথম দিনের মতোই আবেগ ও বিশ্বাসে পরিপূর্ণ। গ্রামবাসীদের মতে, প্রথম বছর মা গঙ্গার আরাধনা করার পর থেকেই সমুদ্রবাঁধ আর কখনও ভয়ঙ্করভাবে ভাঙেনি। তাই মা গঙ্গাকে তাঁরা জাগ্রত দেবী হিসেবেই মানেন।
আজও যখন সমুদ্রের ঢেউ তীর ছুঁয়ে যায়, তখন উপকূলের মানুষজন মনে মনে প্রার্থনা করেন, “মা, আমাদের বাঁধ রক্ষা করো।” সেই বিশ্বাস আর ঐতিহ্যকেই কেন্দ্র করে আজ বাঁকিপুট ও আশপাশের গ্রামগুলোতে আনন্দের বন্যা। মা গঙ্গার আরাধনা যেন আজও তাঁদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে, আর সেই কারণেই অকাল গঙ্গোৎসব আজও সমুদ্রতীরের বুকে এক জীবন্ত ইতিহাস বহন করছে।