এই ঘটনার পর কেটেছে ২ বছর! এর পর ঠিক যেন সিনেমার চিত্রনাট্য! চুরি যাওয়া সেই হারানো সন্তান ফিরে এল মায়ের কোলে। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সম্ভব হল এই অসম্ভব ঘটনা। মা ফিরে পেল তাঁর হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে। উচ্ছ্বসিত গোটা পরিবার।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! প্রায় দু’ বছর আগে যে সন্তানকে মৃত বলে জানানো হয়েছিল হসাপাতালের তরফে, সেই সন্তানকে অবশেষে ফিরে পেল মা। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে অবসান হল এক দীর্ঘ আইনি জটিলতার। সন্তানকে কোলে নিয়ে আনন্দে চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর থানার আড়গোয়াল গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা পাল।
advertisement
২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে প্রতিমা পাল সন্তান জন্মের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন এগরার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে। ২৪ অগাস্ট সকালে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ প্রতিমার পরিবারকে জানায়, তার সদ্যোজাত সন্তান জন্মের পর পরই মারা গিয়েছে এবং শিশুর মৃতদেহ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শোকাভিভূত পরিবার কোনও প্রশ্ন না করে প্রতিমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এই ঘটনার চার দিন পর, অর্থাৎ ২৮ অগাস্ট, একটি সদ্যজাত শিশুকে নিয়ে এক মহিলা টিকা দেওয়ার জন্য আসেন দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। সন্দেহ হওয়ায় হাসপাতাল কর্মীরা খবর দেন পুলিশে। পুলিশ দ্রুত তদন্তে নামে এবং মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, তিনি টাকার বিনিময়ে নার্সিংহোমের মালিকের কাছ থেকে শিশুটি কিনেছেন। ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ নার্সিংহোমের মালিক, তার স্ত্রী, এক দালাল এবং ক্রেতা মহিলাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে তদন্তে জানা যায়, প্রতিমা পালই শিশুটির জন্মদাত্রী। প্রায় দশ দিন পর পুলিশ তাকে খুঁজে পায় এবং জানায় তার সন্তান জীবিত রয়েছে, সুস্থ আছে।
এখানেই শেষ নয়, বহু আইনি জটিলতার কারণে শিশুটিকে অবিলম্বে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। কেটে যায় দু’বছরের বেশি সময়। শিশুকে ফিরে পেতে চলতি মাসের ৩ তারিখ প্রতিমা পাল জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দফতরে যোগাযোগ করেন। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব সুদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শুরু হয় দ্রুত পদক্ষেপ। আদালত, থানা ও হাসপাতাল… সব দিক থেকে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে, মাত্র দশ দিনের মধ্যেই সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়। অবশেষে সোমবার বিকেলে নিমতৌড়ির চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির অফিস থেকে প্রতিমা পালকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার শিশুপুত্রকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সন্তানকে কোলে নিয়ে প্রতিমা পাল কান্না সামলাতে পারেননি। তিনি বলেন, ” যেদিন নার্সিংহোমে আমার ছেলে জন্মেছিল, সেদিনই আমাকে জানান হয়েছিল সে মারা গিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। পরে জানতে পারি, আমার সন্তান জীবিত এবং অন্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এতদিন আইনি জটিলতার কারণে তাকে নিজের কাছে আনতে পারিনি। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ছেলেকে ফিরে পেলাম, এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।”





