পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরেও একই অবস্থা। ছোট ব্যবসায়ীদের মুখের হাঁসি অনেকটাই ফিকে হয়েছে। দু-তিন দশক আগেও পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই জামা-কাপড়ের দোকানগুলিতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় শুরু হয়ে যেত। দোকানিরা নাওয়া-খাওয়ার সময় পেতেন না। ক্রেতাদের সামাল দিতে কার্যত হিমশিম খেতেন।
আরও পড়ুন : জঙ্গলমহলে একনাগাড়ে ‘ডুগ-ডুগ’ শব্দ! এই বিশেষ বাদ্যযন্ত্র ছাড়া পুজো হয় না মনসার
advertisement
নতুন নকশার শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ থেকে শুরু করে শিশুদের পোশাক – সবকিছুর জন্য পসরা সাজিয়ে বসতেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের পোশাকটি হাতে পেতে অপেক্ষায় থাকতেন। বড় দোকানগুলিতে ভিড় এতটাই থাকত যে রাস্তা আটকে যেত। এই ভিড় শুধু বাণিজ্যিক সফলতা নয়, বরং পুজোর আনন্দকেও বাড়িয়ে তুলত। কিন্তু গত কয়েক বছরে ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে কেনাকাটার পদ্ধতি আমূল বদলেছে।
আরও পড়ুন : সন্ধে নামলেই শুরু হয়ে যায় ওদের খেলা, ভয়ে রাস্তায় নামেন না কেউ! অফিসপাড়া অন্ধকার
ক্রেতারা এখন ঘরে বসেই নিজেদের পছন্দের পোশাক বেছে নিতে পারেন, হাজার হাজার পণ্যের মধ্যে তুলনা করতে পারেন এবং আকর্ষণীয় ছাড়ের সুবিধা নিতে পারেন। ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি প্রায়শই নতুন ক্রেতাদের জন্য বিশেষ অফার এবং ডিসকাউন্ট কুপন দেয়। তাছাড়া, বাড়িতে বসে পণ্য হাতে পাওয়ার সুবিধা, রিটার্ন এবং এক্সচেঞ্জের সহজ নীতি – এসব কারণে ক্রেতারা দোকানে গিয়ে সময় নষ্ট করতে আর আগ্রহী নন। এই পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর। যারা অনলাইন প্রতিযোগিতার সঙ্গে পেরে উঠছেন না।
পটাশপুরে কিছু বড় কাপড়ের দোকানে এখনও কিছুটা ভিড় থাকলেও, ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই করুণ। তাদের দোকানে আর পুজোর সেই চেনা ভিড় দেখা যায় না। সারা বছর ধরে যে কটা দিনের জন্য তারা পুজোর ব্যবসার দিকে তাকিয়ে থাকতেন, সেই ভরসাও আজ ফিকে। ক্রেতা কমে যাওয়ায় তাদের আয় কমেছে, অনেক ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে বিকল্প পেশার কথা ভাবছেন। পুজোর আগমন যেন তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারছে না, বরং এক ধরনের অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেনাকাটার এই পরিবর্তন স্বাভাবিক হলেও, এর ফলে ছোট ব্যবসায়ীদের মুখে যে মলিন হাসি ফুটে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের। পুজোর কেনাকাটা এখন কেবল একটি বাণিজ্যিক লেনদেন নয়, বরং একটি সামাজিক অভিজ্ঞতা। অনলাইন কেনাকাটার জনপ্রিয়তা যেমন সুবিধার নতুন দিগন্ত খুলেছে, তেমনি এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী কেনাকাটার সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।