সমগ্র নানুর ব্লক জুড়ে আজ উৎসবের আবহ। কোথাও মণ্ডপে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা চলছে। কোথাও উমার কারুকার্য পৌঁছেছে শেষ পর্যায়ে। শারদোৎসবকে ঘিরে প্রাণের স্পন্দনে মুখরিত বীরভূমের নানুর।
advertisement
ঐতিহ্য ও ইতিহাসের মেলবন্ধন নানুরের দুর্গাপুজো। একদিকে চণ্ডীদাসের স্মৃতিবিজড়িত এই জনপদ, অন্যদিকে জেলার দক্ষিণ-পূর্বে অজয় ও ময়ূরাক্ষী নদীর মিলিত অববাহিকার বিস্তীর্ণ কৃষিজমির ভাণ্ডার। এই দুই বৈশিষ্ট্য নানুরকে আলাদা মর্যাদা দিয়েছে। তবে স্থানীয়দের আক্ষেপ, বৈষ্ণব পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি চন্ডীদাসের জন্মস্থান হিসেবে খ্যাতি পেলেও পর্যটনক্ষেত্রে আজও অবহেলিত নানুর। নানুরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এখনও টিকে আছে শতাব্দী প্রাচীন দুর্গোৎসবের রীতি। এলাকার অনেক গ্রামে রয়েছে ৪০০ বছরেরও পুরনো জমিদারি পুজো।
যদিও আজ রাজা-জমিদার নেই, জমিদারি রাজত্ব নেই তবু সেই ঐতিহ্য ধরে রাখা হয়েছে পরম্পরায়। অন্যদিকে শতাব্দী প্রাচীন ভট্টাচার্য পরিবারের দুর্গোৎসব আজও অনুসরণ করে বিশেষ রীতি। অষ্টমীর সময় সেখানে ব্যবহার করা হয় জলঘড়ি বা ক্লেপসিড্রা। যেখানে আধুনিক ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা নয়, সময় মাপা হয় ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ায়।
আরও পড়ুন: চুম্বকের মতো টেনে আনে ‘সাপ’…! এই চার ‘গন্ধ’ বিষধরের জন্য ‘অমৃত’ সমান, এখনই দূর করুন!
নানুর ব্লকে বর্তমানে আনুমানিক প্রায় ২৫০টিরও বেশি দুর্গাপুজো হয়। এর মধ্যে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পুজোর সংখ্যা ১৯৯। গ্রামীণ অর্থনীতি নির্ভর অঞ্চলেও থিম পুজোর প্রবল স্রোত এবছর। কীর্ণাহারের মরশুমি ক্লাব মাতৃশক্তির আরাধনাকে কেন্দ্র করে লোকজ শিল্প ভাবনায় প্যান্ডেল গড়েছে। চাটাই, কুলো, তালপাতার মতো সহজলভ্য গ্রামীণ উপাদান দিয়ে মণ্ডপসজ্জা করছেন শিল্পীরা।
ক্লাবের সম্পাদক সৌমেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মূলত হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ লোকজ ভাবনাকে ফুটিয়ে তুলতেই বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে উদ্বেগের কারণ বৃষ্টি।” কীর্ণাহার ইউথ ক্লাব তাদের ৩৯তম বর্ষে সাজিয়েছে ‘পটের সাজ’-এর থিম। নানুর চণ্ডীদাস স্টার ক্লাব প্রাধান্য দিয়েছে মূর্তির শৈল্পিকতায়। শ্রীপল্লী দুর্গা উৎসব সমিতি এবার পরিবেশ সুরক্ষা বার্তা দিতে মণ্ডপকে সাজাচ্ছে সবুজ ভাবনায়। সব মিলিয়ে উৎসবের মেজাজে বীরভূম।
সৌভিক রায়