হেঁটে চলাফেরা করতে হয় এক পায়ে। আর সেই এক পায়ের দৌড়ে অন্যের থেকে পিছিয়ে নয় বরং অনেকটাই এগিয়ে অনামিকা। অনামিকা দাস, বাড়ি কোলাঘাটের বোরডাঙ্গি গ্রামে। পড়াশোনা তার বাথানবেড়িয়া শ্রীনিবাস বিদ্যামন্দিরে। চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬২ শতাংশ নম্বর পেয়ে সফলতার উত্তীর্ণ হয়েছে সে। কিন্তু এই পড়াশোনার পথে তার বাধা হয়েছিল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। কারণ জন্মলগ্ন থেকেই বাঁ পায়ের হাঁটুর নীচ থেকে নেই। হাঁটাচলা থেকে দাঁড়িয়ে থাকতে ওই একটি পা। আর সেই এক পায়ের দৌড়ে অন্যের থেকে পিছিয়ে নয় বরং অনেকটাই এগিয়ে অনামিকা।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
একদিকে দৈহিক প্রতিবন্ধকতা, অন্যদিকে পরিবারের চরম দারিদ্র্যতা হার মানতে চলেছে এই গরীব ঘরের ছাত্রীর অদম্য জেদ ও মনের জোর। মা বলেছে আর পড়ানো সম্ভব নয়। ওর মা অসীমা দেবীর কথায়, “স্কুলের ফি থেকে প্রতি মাসে প্রাইভেট টিউশনির এত টাকা, বইপত্র সহ যাবতীয় খরচ খুব কষ্ট করে চালিয়েছি। আর সম্ভব নয়। পায়ে একটি অপারেশন করালে হয়ত কিছুটা হাঁটতে পারত। তার জন্য চার পাঁচ লাখ টাকার প্রয়োজন। কোথায় পাব! কোলাঘাট একটি সংস্থা কৃত্রিম পা করে দিয়েছে। ওর বয়স বাড়ার সঙ্গে সেটাও ছোট হয়ে গেছে।
অনামিকা জানিয়েছেন, দারিদ্রতার কারণে বাবা-মা হয়ত পড়াতে পারবে না। কিন্তু পড়তে চাই। পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হতে চাই।’ কোলাঘাটের ওই সংস্থার কাছে তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছে সে। বাবা অনুকূল দাস ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক। কাজ করে যৎসামান্য আয় করেন। হতদরিদ্র সংসারে মা অসীমা বহুকষ্টে কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে সংসার চালান।
কোলাঘাট বোরডাঙ্গি গ্রামে জশাড় রোডের পাশেই একচিলতে মাথা গোঁজার ঠাঁই। অনামিকা এবারে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৩৫ নম্বরে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে একপায়ের দৌড়ে অনেককেই পেছনে ফেলে এগিয়ে আছে। অনামিকা আরও অনেক পড়াশোনা করে ওই এক পায়েই দাঁড়িয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। বড় হয়ে ওর মত দুর্ভাগ্যগ্রস্থ মানুষের পাশে থাকতে চায়।
সৈকত শী





