আধুনিক যুগে বাতানুকূল যন্ত্রের রমরমায় শীতলপাটির কদর কমে গেলেও গ্রামবাংলায় আজও শীতলপাটির চাহিদা দেখা যায় । এমনকি বিদেশেও ভালই কদর রয়েছে বাংলার এই প্রাচীন শিল্পের । শীতলপাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল হল মুর্তা বেত নামক একটি গাছের ছাল । মূলত গ্রীষ্মকালীন জলবায়ুতে এই গাছের চাষ করা হয়। প্রমাণ সাইজের বেত গাছগুলোকে প্রথমে কেটে নেওয়া হয়। এর পর সেগুলি রোদে কিছুটা শুকিয়ে নেওয়ার পর বিশেষ পদ্ধতিতে বঁটি দিয়ে তার থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়া হয়।
advertisement
এর পর সেই ছাড়ানো আঁশ প্রায় দিন সাতেক ভাতের মাড় ও জল একসঙ্গে মিশিয়ে তার মধ্যে ভিজিয়ে রাখা হয় । পরবর্তী সময়ে সেই জলে বেতের আঁশগুলো সিদ্ধ করলেই তা উপযুক্ত হয়ে ওঠে শীতলপাটি তৈরির জন্য ।
আরও পড়ুন : বাহারি গাছের ছাদ বাগান বানিয়ে চমক মালদহের প্রকৃতিপ্রেমী সেন্টু খানের
তবে বাংলার এই কুটির শিল্পের প্রতি ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছে পাটি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা শিল্পীরা । কারণ, একটি শীতলপাটি হাতে বুনতে প্রায় ৪ থেকে ৫ দিন সময় লেগে যায় । এত পরিশ্রমের পর সেভাবে পারিশ্রমিকও মেলে না । এক শিল্পী আক্ষেপ করে জানালেন, সারাদিন সংসারের কাজ সামলে এত পরিশ্রম করে একটি শীতলপাটি বানিয়ে পারিশ্রমিক মেলে মাত্র ২০০ টাকা ।
আরও পড়ুন : সঙ্গীতের মঞ্চে জাতীয় স্তরে সেরার সম্মান সিউড়ির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর
বাংলার কোচবিহার শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত হলেও উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া পুরসভার নতুনগ্রামে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি পরিবার বংশপরম্পরায় টিকিয়ে রেখেছে বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে । এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই সরকারিভাবে কার্ড পেয়ে গেলেও শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারিভাবে তেমন কোনও সুবিধা পান না বলেই অভিযোগ । পাশাপাশি তাঁদের আক্ষেপ শত কষ্টেও তাঁরা এখনও এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখলেও নতুন প্রজন্ম এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
(প্রতিবেদন- রুদ্রনারায়ণ রায়)