দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সব্জি ভান্ডার হিসাবে লোকে ভাঙড়-কে চেনে। ভাঙড়ের দুটি ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সবকটি এলাকাতেই কম বেশি ধান ও সব্জির চাষ হয়। রবি শষ্যের চাষে আবার অনেকটাই এগিয়ে ভাঙড় দুই নম্বর ব্লক। এই ব্লকের ১০ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সত্তরটি গ্রামের মাঠে গেলে এখন দেখা যাবে ফুল কপি, বাঁধা কপি, লঙ্কা, টম্যাটো, পালং শাক, কড়াই শুঁটি, বিট, গাজর,ক্যাপসিকামের খেত সবুজে মোড়া। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের পরেও যথেষ্ট সবুজের সমারোহ ভাঙড়ের সব্জি খেত গুলোতে। কারণ এখানাকার চাষীরা শুধু দক্ষ তা নয়, সেই সঙ্গে অনেক বেশি আধুনিক। ভাঙড়ের চাষী মাজেত মোল্লা বলেন, "আমরা যেসব ফসল ফলাই তার বীজ বপন, চারা গাছ নিজেরাই তৈরি করি। ভাঙড়ে ভাল সব্জি নার্সারী আছে বলেই, সব্জি উৎপাদন ভাল হয়।"
advertisement
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, অকাল বৃষ্টি থেকে সব্জির নার্সারি বাঁচাতে গুছুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আসমত মোল্লা নিজের বাড়ির ছাদে নার্সারি তৈরি করেছেন। আসমতের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল ছাদের ওপর কালো রঙের মোটা প্ল্যাস্টিক পেতে তার ওপর দু-তিন ইঞ্চি পুরু মাটি ফেলেছেন। সার, জল দিয়ে সেই মাটি চাষের উপযুক্ত করেছেন। প্ল্যাস্টিকের চারপাশে বাঁশ বেঁধে আলের মত করা হয়েছে। এবার সেই মাটিতেই বপন করা হয়েছে লঙ্কা, ওলকপি, বেগুনের চারা। চারাগুলি প্রমান সাইজের হলে সেগুলি মাঠে মূল খেতে বপন করা হবে। আসমত বলেন, "মাঠে যখন কোন সব্জির নার্সারি করি তখন অকাল বৃষ্টিতে সেগুলি নষ্ট হয়। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য অনেক সময় আমরা প্ল্যাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখি। দেখা যায় শিয়াল, কুকুর বৃষ্টিতে সেই ছাউনির নিচে ঢুকে ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। তাই বাড়ির ছাদেই এই নার্সারী করেছি। বাড়ির মহিলারাও নার্সারির দেখভাল করতে পারেন।"
আসমত কে দেখে তার প্রতিবেশী ছালামত, মোরসেলিম, হারান, বিভাসরাও উৎসাহিত হয়েছেন ছাদ নার্সারী করার জন্য। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, "এই জেলায় ভাল সব্জি, ফল চাষে সবসময় পথিকৃত ভাঙড়ের চাষীরা। ওদের উদ্ভাবনী বুদ্ধির জেরে ইয়াসে, জাওয়াদে খুব একটা ক্ষতি হয়নি ফসলের। এই ভাবনা আগামী দিনে রাজ্যের অন্যান্য এলাকার চাষীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজে লাগবে।"
Rudra Narayan Roy