অনেক পরিকল্পনা করে তৈরি করা নিউটাউনকে পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত করা নিয়ে এবার শুরু থেকেই বিতর্ক হচ্ছে। এই প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দেবেন নিউটাউন উপনগরীর বিলাসবহুল আবাসনের বাসিন্দারা। কিন্তু শুধু নিউটাউন নয়, বারুইপুরের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে গড়ে উঠেছে একের পর এক উপনগরী, বড় বড় আবাসন। আর সিঙ্গেল ফ্ল্যাট বাড়ির কথা তো ছেড়েই দিন। এই সিঙ্গেল ফ্ল্যাটে (কমপ্লেক্সের মধ্যে নয় এমন ফ্ল্যাট বাড়ি) ছেয়ে গিয়েছে বারুইপুর, সোনারপুরের শহরঘেঁষা পঞ্চায়েতগুলি। বাইরে থেকে বহু মানুষ এসে বসবাস করছেন। পরপর বহুতল তৈরি হওয়ায় এই এলাকাগুলিতে পানীয় জল, নিকাশির মতো পরিষেবা যে ব্যাহত হচ্ছে তা মেনে নিচ্ছে পঞ্চায়েতও।
advertisement
আরও পড়ুন: দেরিতে বর্ষা আসায় ধান চাষে ক্ষতির আশঙ্কা
পুর এলাকায় ফ্ল্যাট বা আবাসন তৈরির ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি আছে। রয়েছে নজরদারিও। কিন্তু পঞ্চায়েতে সেই ব্যবস্থা তা অনেকটাই শিথিল। বড় আবাসনগুলির ক্ষেত্রে তাও জেলা পরিষদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সেসবেরও তেমন বালাই নেই। ফলে মুড়ি-মুড়কির মতো যেখানে সেখানে গড়ে উঠছে চারতলা-পাঁচতলা ফ্ল্যাট। পঞ্চায়েত এলাকার সুযোগ নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় নিয়ম কানুনও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চড়া দামে চাষের জমি কিনে নিয়ে তৈরি হচ্ছে ফ্ল্যাট। আবার পুকুর বা জলাজমি ভরাট করেও বহুতল নির্মাণের অভিযোগ কম নয়। এর ফলে পঞ্চায়েত এলাকার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মুখে তুলি ধরে মাদার টেরিজার ছবি এঁকে বাজিমাত পাথরপ্রতিমার যুবকের, নাম রেকর্ড বইয়ে
বারুইপুরের মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের তরফেই যেমন সম্প্রতি বহুতলের বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে জেলা ও মহকুমা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতের বিদায়ী উপপ্রধান হবিবুর রহমান বৈদ্য বলেন, আমার এলাকায় গত কয়েক বছরে অন্তত তিনশো ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। বাইরের লোকজন এখানে জায়গা কিনে জমির চরিত্র বদল না করে বেআইনি ভাবে বহুতল তৈরি করে বিক্রি করে দিচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম কানুন মানা হচ্ছে না। পঞ্চায়েত প্রশাসনের পক্ষে গোটা বিষয়টা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।বহুতলের রমরমায় প্রভাব পড়ছে পঞ্চায়েতের পরিষেবায়। ভোটের আগে যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এলাকার মানুষ।
এলাকায় অনুমতি না নিয়ে অনেক ফ্ল্যাট, বহুতল তৈরি হচ্ছে বলে মেনে নেন সোনারপুর উত্তরের বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম। তাঁর কথায়, অনেক ক্ষেত্রেই পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে অনুমতি না নিয়ে বহুতল তৈরি হচ্ছে। আমরা অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিই। তবে এর জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে কোনও পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন সে দিকে লক্ষ্য রাখা হয় বলে দাবি করেন তিনি।
তবে এই ঘটনা থেকে একটা বিষয়ে পরিষ্কার, পঞ্চায়েত মানেই আগেকার গ্রামের সেই ধারণা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে।
সুমন সাহা