অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলায় এসে হারিয়ে যান বহু পুণ্যার্থী। পুলিশ-প্রশাসন, মেলা কমিটির অনুসন্ধান কেন্দ্রে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন পরিজনরা। কেউ আবার হারিয়ে গিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান। অনেকেই এভাবে হারিয়ে যাওয়া পরিজনের সন্ধান পেয়ে যান। তবে বহু মানুষ থাকেন যারা ওই ভিড়ের মধ্যে আপনজনকে আর খুঁজে পান না। গঙ্গাসাগরে এসে হারিয়ে যাওয়া আপনজনদের সন্ধান দিতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে হ্যাম রেডিও।
advertisement
আরও পড়ুন: মাংস থাকছে তো মিড ডে মিলে, কেমন পরিবেশে রান্না হচ্ছে? স্কুলে স্কুলে গিয়ে সরকারের নজরদারি
ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের ৩৯ জন সদস্য এই বছর মেলা শুরুর দিন থেকে গঙ্গাসাগরে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা কয়েক হাজার মানুষকে পরিজনের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ নেহাতই স্বেচ্ছাশ্রম। শখের রেডিও ব্যবহারের নেশা থেকে এই পরীজনদের খুঁজে বের করার কাজ। সদস্যরা নীল রঙের টি শার্ট পরে আছেন, তাতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ‘হ্যাম’। সবার হাতে একটা করে ভিএইচএফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) ওয়াকিটকি। কচুবেড়িয়া, লট-৮, নামখানা, চেমাগুড়িতে হোগলা পাতার ঘরে হ্যাম রেডিওর কন্ট্রোল রুম তৈরি হয়। মূল কন্ট্রোল রুমটি গঙ্গাসাগরে প্রশাসনিক কার্যালয়ের পাশে। পুলিশ বা জেলা প্রশাসনের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা গোটা গঙ্গাসাগর মেলা জুড়ে ঠিকমতো কাজ করে না কখনওই। ফলে কোথায় যানজট, কোথায় বেশি ভিড়, কোথায় কে আহত হল, জলের ট্যাঙ্ক ফাঁকা হল বা কল নষ্ট হয়ে আছে এ সব তথ্যই প্রশাসন আর মেলা কমিটির কাছে দ্রুত পৌঁছে গিয়েছে হ্যাম রেডিও-র স্বেচ্ছাসেবকদের মারফত।
যেহেতু সাগরে মোবাইল পরিষেবা, দুর্বল তাই বহু ক্ষেত্রে প্রশাসনিক যোগাযোগ হ্যাম রেডিও-র ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওয়াকিটকির উপর নির্ভর করেছে।গঙ্গাসাগরে এই নিয়ে ২৪ বছর হয়ে গেল ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের বিশেষ পরিষেবা প্রদানের। বিভিন্ন সময়ে প্রকৃতিক বিপর্যয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এই শখের রেডিও অপারেটররা। নিজেদের তৈরি করা অ্যান্টেনায় বাতাসের গতি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উচ্চ তরঙ্গে ভর করে কথা পৌঁছে যায় দূর থেকে দূরে, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হ্যাম সদস্যদের কাছে। এরপর হারানো মানুষকে খোঁজার কাজটা নেহাতই তাঁদের নজরদারি আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। যদিও, বাকি সব ক্ষেত্রে সরকারি স্বীকৃতি মিললেও গঙ্গাসাগরের এই স্বেচ্ছাশ্রমের কোনও স্বীকৃতি এখনও অবধি পাননি হ্যাম রেডিও-র এই স্বেচ্ছাকর্মীরা।
সুমন সাহা





