কয়েক শত বছর পূর্বে রাজস্থানের বারাণসি থেকে এমনই এক হিন্দু রাজা এসেছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদার এক দুর্গম অঞ্চল হেঁসলা গ্রামে। সে-সময় গভীর জঙ্গল ও বড়-বড় পাহাড়ে ঘেরা ছিল এই গ্রাম। এলাকার আদিবাসী ও জঙ্গলজীবী সম্প্রদায়ের মানুষদের মন জয় করে অল্প সময়েই পাহাড় , জঙ্গল কেটে এখানে রাজপ্রাসাদ তৈরি করেন রাজা দ্বিগ্বীবিজয় প্রতাপ সিংহদেও।
advertisement
একে , একে তিনি দখল নেন আশেপাশের ২২টি মৌজার। ধীরে, ধীরে তৈরি করেন ঠাকুরদালান , কাছারি , নাটমন্দির , বাগানবাড়ি। তাঁর ঠাকুরদালানেই শুরু হয় মা দুর্গার আরাধনা। প্রথমে খড়্গকে সামনে রেখে দেবী দুর্গার পুজো হত। পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়ার সংস্কৃতি ছৌ-নাচকে অনুকরণ করে দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরি করে পুজো শুরু হয়। ডাক , বাদ্য-শঙ্খের সঙ্গেসঙ্গে বন্দুকে গুলি চালিয়ে পাহাড়ি হেঁসলা নদীর ঝর্ণা থেকে রাজা নিজে দেবী দূর্গার ঘটের বারি আনতেন। এখনও সেই প্রথা মেনেই ঘটের বারি আনা হয়। তবে বন্দুকের পরিবর্তে শব্দ-বাজী ফাটানো হয়। এখনও এখানে প্রাচীন বৈদিক রিতী মেনেই দেবী দুর্গার পুজো হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে এই পুজো হয়।
রাজ পরিবারের বর্তমান রাজা কন্দর্পনারায়ণ সিংহদেও বলেন , ” আগের তুলনায় বর্তমানে চাকচিক্য অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবুও রীতিনীতি মেনে এই পুজো চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” স্থানীয় এক বাসিন্দার আসশোষ, ” এককালে রাজবাড়িতে এই পুজো জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হত। কিন্তু এখন আর সেই জাঁকজমক দেখা যায় না।
বর্তমানে না আছে রাজা , না আছে রাজতন্ত্র। কিন্তু দূর্গম এই হেঁসলা গ্রামে এখনও স্বমহিমায় দেবী দুর্গার পুজো হয়। পুজোর এই ক’টাদিন আবার নতুন করে সেজে ওঠে রাজপ্রাসাদ। এই সময় জরাজীর্ণ রাজপ্রাসাদ যেন ফিরে পায় সেই পুরনো ঐতিহ্য। পুজোর দিনগুলোতে মানুষ ভিড় জমান রাজবাড়িতে। সারাবছর রাজ পরিবারের উত্তরসুরীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও দুর্গাপুজোর সময় সকলেই এখানে উপস্থিত হন। পুজোর শেষে ফের যে-যাঁর গন্তব্যে চলে যান। ফাঁকা পড়ে থাকে এই রাজপ্রাসাদ। হেঁসলা পাহাড়ের কোলে এই রাজপ্রাসাদ অপেক্ষা করতে থাকে আরও একটি বছরের জন্যে।
শমিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়