#তমলুক: ২৬ জানুয়ারি ভারতবর্ষের প্রজাতন্ত্র দিবস। ১৯৫০ সাল থেকে ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে, পূর্ণ স্বরাজের অধিকার দাবি করা হয়। তাই ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে স্মরণ রাখতে, ১৯৪৯ সালে গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর ১৯৫০ সালে ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। প্রজাতন্ত্র অর্থাৎ জনগণের সরকার। ভারতবর্ষের প্রথম জনগণের সরকার স্থাপিত হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমায়।
advertisement
১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা অগাস্ট আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবর্ষের নানা জায়গায় মহাভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন সরকার গঠিত হয়। ভারতবর্ষের বেশ কিছু জায়গায় স্বাধীন জাতীয় সরকার গঠিত হয়। মহারাষ্ট্রের সাতারা, উত্তরপ্রদেশের বলিয়া ও বাংলার বুকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমার গঠিত হয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ১৯৪২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের কার্যকালের মেয়াদ ছিল প্রায় দু'বছর। ১৯৪৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সমান্তরালভাবে স্বাধীন সরকার চালিয়ে গেছে। গান্ধিজীর নির্দেশে তৎকালীন কংগ্রেস নেতারা তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভেঙে দেয়।
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সর্বপ্রথম সর্বাধিনায়ক ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। কারণ পরাধীন ভারতবর্ষের প্রায় দু'বছর স্বাধীনভাবে সরকার চালানোর গৌরব অন্য কোন জাতীয় সরকারের নেই। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সরকার হয়ে উঠেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ১৯৪২ সালের ৯ আগস্ট ভারতবর্ষে জুড়ে শুরু হয় ভারত ছাড়ো আন্দোলন। যার মূল স্লোগান ছিল 'ইংরেজ, তুমি ভারত ছাড়ো'।
অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটি বরাবরই স্বাধীনতাকামী। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আঁচ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে মেদিনীপুর জুড়ে। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে যোগদান করে। এই আন্দোলন চলাকালীন তমলুক মহকুমার কংগ্রেস নেতারা সিদ্ধান্ত নেয় ইংরেজদের থানা নিজেদের দখলে আনার। ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থানা দখলের দিন ধার্য হয়। ঐদিন তমলুক মহকুমার বিভিন্ন থানায় দখল করতে গিয়ে শহীদ হন বহু মানুষ। তমলুক থানা দখল অভিযানে শহীদ হন মাতঙ্গিনী হাজরা সহ ১২ জন। মহিষাদল থানা দখল অভিযানে গিয়ে শহীদ হন ১৬ জন। ভারত ছাড়ো আন্দোলন সমগ্র মেদিনীপুর জুড়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিণত হয়। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ জন স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এই অগাস্ট আন্দোলনের পটভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত হয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। এই জাতীয় সরকারে সর্বশ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধি অংশ নেয়। ২১ মাস সুষ্ঠু স্বাধীনভাবে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কার্যকলাপ চালিয়ে যায় নেতারা। গান্ধিজীর নির্দেশে এক সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ সালে কংগ্রেস নেতারা তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভেঙে দেয়।
Saikat Shee