১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। অবিভক্ত তমলুক মহকুমার লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনকারীদের বসবাসের জন্য রাজবাড়ির একাংশ ছেড়ে দেন। এই রাজবাড়িতে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনকারীদের শিবির থেকেই লবণ সত্যাগ্রহের আচার্য ও উপাচার্য হিসেবে নির্বাচিত হন সতীশ সামন্ত ও সুশীল কুমার ধাড়া। অবিভক্ত তমলুক মহকুমার ১৫,০০০ হাজার যুবক যুবতী এই শিবিরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নাম লিখেছিলেন। রাজবাড়ি থেকেই সত্যাগ্রহীরা লবণ আইন ভঙ্গের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ ব্রিটিশ বাহিনী রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায়কে গ্রেফতার করে ১৯৩০ সালের ১৫ মে। কিন্তু রাজা অসুস্থ থাকায় ২২ মে মুক্তি পান।
advertisement
রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের পুত্র ধীরেন্দ্র নারায়ণ রায় লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেন। ১৬ এপ্রিল ১৯৩০ সালে গ্রেফতার করা হয় তাঁকেও। রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণের অপর এক পুত্র হরেন্দ্র নারায়ণকেও ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে। ১৯৩৮ সাল তৎকালীন কংগ্রেসের সভাপতি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ১১ এপ্রিল তমলুক শহরে আসেন। শহরে কংগ্রেসের সভা অনুষ্ঠিত হবে কিন্তু সভা করার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সময় কংগ্রেসের নেতাগণ বৃদ্ধ রাজা সুরেন্দ্র নারায়ণ রায়ের দ্বারস্থ হন। বৃদ্ধ রাজা রাজবাড়ির অন্দরে খোসরঙের মাঠের ফলন্ত আমবাগান কেটে সুভাষচন্দ্রের সভার আয়োজন করেন।
আরও পড়ুন: একা হাতে বিরিয়ানি রান্না, ফুলপ্লেটের দাম এত কম? চমকে যাবেন! কলকাতার কাছেই এর ঠিকানা
১৯৪২ সালের অগাস্ট আন্দোলনেও এই রাজ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। রাজ পরিবারের সন্তান কুমারেন্দ্র নারায়ণ রায় এই আন্দোলনে অংশ নেন ছাত্রাবস্থায়। কুমারেন্দ্র নারায়ণ তখন হ্যামিল্টন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় কুমারেন্দ্র-সহ তাঁর ১১ জন সহপাঠীকে।
বরাবর ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে স্বদেশী বিপ্লবীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপ্লবীদের আখড়া রক্ষিত বাড়ি যখন ব্রিটিশ পুলিশদের কুনজরে আসে, তখন রক্ষিত বাড়িতেই অনুশীলন সমিতি রাজবাড়িতে স্থানান্তরিত করেন স্বদেশীরা। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তমলুক রাজবাড়ি এক উল্লেখযোগ্য স্থান নিয়েছে।
Saikat Shee