ঢেউ-এর তটদেশ থেকে উৎপত্তি, তাই নাম ‘ঢিঙ্গুলেশ্বরী’। কিন্তু লোকমুখে বেশি পরিচিত ঝিংলেশ্বরী মা হিসেবে। নন্দকুমার ব্লকের ভবানীপুর এলাকায় ঝিঙলেশ্বরী মায়ের প্রাচীন ইতিহাস সত্যি অবাক করার মতো। বর্তমান সেবাইতদের কথায় আনুমানিক প্রায় পাঁচ শতাধিক বছর আগে জাহাজের মাস্তুলের উপর অধিষ্ঠিত হয়ে আবির্ভাব ঘটেছে মা ঝিংলেশ্বরীর।
advertisement
ভৌগলিক অবস্থানগত ভাবে তৎকালীন সময়ে এই এলাকা নদীগর্ভ ছিল। নৌকা, বোট, জাহাজ চলাচল করত। একবার নদীপাড়ে দাঁড়িয়ে এক মহিলা জাহাজের চালকদের কাছে ‘হূঁকা’ খাওয়ার জন্য আগুন চান। তখন তাঁকে জাহাজে উঠে আসতে বলে মাঝিরা। কিন্তু তিনি জানান, জাহাজে উঠলে জাহাজ ডুবে যাবে। এই কথা শুনে হাসাহাসি করে মাঝিরা। তাতেই ক্রদ্ধ হয়ে জাহাজে উঠে পড়েন সেই মহিলা। তৎক্ষণাৎ নদীতে বসে যায় জাহাজটি। নিজের স্বরূপ ধারন করেন মা ঝিঙলেশ্বরী। নিজেদের ভুল বুঝতে পারে মাঝিরা। রাতে তাম্রলিপ্ত রাজাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে পুজোর আদেশ দেন। সেইমতো তাম্রলিপ্ত প্রদেশের (বর্তমান তমলুক) রাজা পুজোর ব্যবস্থা করেন।
সেই থেকে বর্তমানেও নিত্য পুজো হয়ে আসছে। এখন মন্দির পাকা হয়েছে। তবে জাহাজের মাস্তুল-সহ মাটির যে বেদীতে মা ঝিংলেশ্বরী অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন, সেই অংশের কোনও সংস্কার করা হয়নি। সেবাইতরা জানান তেমনটাই মায়ের আদেশ। কথিত আছে এই মন্দিরে মানত করলে মা ঝিঙ্গেশ্বরী ভক্তদের বিমুখ করেন না, তাদের মনস্কামনা পূরণ করেন। ভক্তরা খুশি হয়ে মায়ের পুজো দেন।
আরও পড়ুন– রোগা হওয়াটাই যেন এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে! এই তিন সহজ উপায়ে তুড়ি মেরে কমান ওজন
বর্তমানে সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে। প্রতিদিন মাছ, মাংস, তরকারি, পায়েস, মিষ্টান্ন সহযোগে অণ্ণভোগ নিবেদন করা হয়। নিবেদন করা অন্য ভোগে কাঁকড়া পাঁঠার মাংস আর পাশাপাশি হাঁসের মাংসও থাকে। এই এলাকায় বসবাসকারী প্রত্যেকে দেবী ঝিংলেশ্বরীকে নিজেদের পরিবারের একজন বলে মনে করেন। তাই চাষের সবজি, মাছ, পালিত হাঁস, ডিম নিবেদন করা হয়। তা ছাড়া এই এলাকা ছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রলার, বোট, জাহাজ মালিকরা কাঁকড়া নিবেদন করে পুজো দেন।
Saikat Shee