অথচ এক সময় বাংলার গ্রাম থেকে শুরু করে শহর সর্বত্র গরম থেকে নিস্তার পেতে এই তালপাতার পাখাই ছিল ভরসা স্থল। এমনকি বিদ্যুৎ চলে আসার পরও যখন গ্রীষ্মকালের সন্ধ্যেয় ঘন ঘন লোডশেডিং হতো তখন এই তালপাতার পাখা দিয়েই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের হাওয়া করতেন মা-দিদারা। কিন্তু সেই ছবি আজ বেশ খানিকটা ফিকে হয়ে গেছে। এখন গ্রামে গ্রামেও বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে গিয়েছে। তার উপর আগের মত আর ঘনঘন লোডশেডিং হয় না। সর্বোপরি প্লাস্টিকের মজবুত হাতপাখা এসে যাওয়ায় এক ধাক্কায় কদর কমে গিয়েছে তালপাতার হাতপাখার।
advertisement
আরও পড়ুন: সতীঘাট ব্রিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মানবিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকল সকলে
চাহিদা কমে যাওয়ায় মাথায় হাত তালপাতার হাতপাখা তৈরির কারিগরদের। মুশকিল হচ্ছে তালপাতার হাতপাখা কেবলমাত্র গরম থেকে বাঁচার একটা উপায় নয়, এটি একটি শিল্প। গ্রাম বাংলার প্রাচীন শিল্প। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই শিল্প আজ বিলুপ্তপ্রায়। কিন্তু এই শিল্পের শিল্পীরা আজ কেমন আছেন?
এই নিয়ে কাটোয়ার এক হাতপাখা শিল্পীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, শীতকালজুড়ে এমনিতেই তাঁদের কাজ বন্ধ থাকে। মূলত গরমের সময়টাই এই তালপাতার হাতপাখার কারবার হয়। কিন্তু এখন চাহিদা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকায় বর্তমানে গ্রীষ্মকালেও তাঁরা অনেক দিন পাখা তৈরি করেন না। কারণ আগে তৈরি করা পাখা বিক্রি না হয়ে জমে থাকে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া-১ নম্বর ব্লকের বাঘটোনা গ্রামের মধ্যে আছে থান্ডার পাড়া। এই থান্ডার পাড়ার প্রায় সকল পরিবারই তালপাতার হাতপাখা তৈরি করে। তাঁরাই জানালেন, বর্তমানে একেকটি তালপাতার পাখা তৈরি করতে খরচ পড়ে ৫ থেকে ৭ টাকা। যেটা বাজারে বিক্রি হয় ১০ থেকে ১৫ টাকায়। কিন্তু আজকাল আর বিশেষ খদ্দের পাওয়া যায় না। যারা হাতপাখা কেনে তাঁরাও বেশির ভাগ প্লাস্টিকের তৈরি চাইনিজ পাখার দিকে ঝুকেঊ পড়েন। তার দামও তুলনায় কম। সব মিলিয়ে গভীর সঙ্কটে তালপাতার হাতপাখা তৈরির শিল্প। আর কতদিন এই পাখা তৈরি হবে তা নিয়েই প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে।