ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল একজন প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পী হওয়ার। কিন্তু পথ একেবারেই সহজ ছিল না। রানুর বাবা দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। সংসারের ভার সামলাতে রানুকে কাজ করতে হয়েছে প্রাথমিক স্কুলে। সকালে ক্লাস, বিকেলে নাচের অনুশীলন আর রাতে অনুষ্ঠান, এই কঠিন রুটিনই ছিল তাঁর জীবনের অংশ।
advertisement
সমাজও পাশে ছিল না সবসময়। রাতে অনুষ্ঠান থেকে ফেরার কারণে অনেকেই কটূক্তি করেছেন। বাবাকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে, “মেয়েকে বিয়ে দাও, নাচ শিখিয়ে কোনো লাভ নেই।” কিন্তু বাবা-মা ও গুরু শ্রীমতী সুস্মিতা ঘোষ তাঁকে ভরসা দিয়েছেন। গুরুমাতা শুধু শিক্ষক নন, মায়ের মতো প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থেকেছেন।
অবশেষে সেই অধ্যবসায়ের ফল মিলল। সম্প্রতি সারা ভারতবর্ষে অনুষ্ঠিত CCRT সিনিয়র স্কলারশিপ প্রতিযোগিতাতে বিজয়ী হয়ে জাতীয় স্তরে উজ্জ্বল করলেন বাংলার নাম। সেখানে তিনি উপস্থাপন করেছিলেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী গৌড়ীয় নৃত্য। গৌড়ীয় নৃত্য ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলেও বাংলায় তা খুব একটা প্রচলিত নয়। তাই রানুকে অনেকেই অন্য নৃত্যশৈলী বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের মাটি ও সংস্কৃতির গৌরবকে আঁকড়ে ধরে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। আর সেই দৃঢ়তাই এনে দিয়েছে আজকের সাফল্য। রানু বলেন, “সমাজের কথা শুনলে কোনোদিন শিল্পী হওয়া যায় না। আমি জানতাম পথ কঠিন, কিন্তু স্বপ্নের জন্য লড়াই করতেই হবে।”
গৌড়ীয় নৃত্যের পাশাপাশি তিনি কত্থক, রবীন্দ্রনৃত্য ও লোকনৃত্যের বিভিন্ন ধারায়ও দক্ষ। উত্তরবঙ্গ থেকে জাতীয় মঞ্চে এই স্বীকৃতি কেবল তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের গর্ব। ভবিষ্যতে তিনি চান গৌড়ীয় নৃত্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলার সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে। রানুর মা বলেন, “আজ খুব খুশি লাগছে, চাই রানু আরও দূর এগিয়ে যাক।”
রানুর এই যাত্রা প্রমাণ করে দিয়েছে – অভাব, অসুস্থতা কিংবা সমাজের বাধা কোনোদিনই স্বপ্নকে হারাতে পারে না। যদি সাহস থাকে, তবে নাচের মঞ্চ থেকেই লেখা যায় জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কবিতা।