বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে হাঁটুজল জমে রয়েছে। কোথাও ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ে ডুবে আছে, কোথাও আবার আলপথ ভেসে গিয়েছে। কৃষকরা হাতে কোদাল নিয়ে জমির আল কেটে অতিরিক্ত জল বের করার প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রকৃতির সামনে সেই চেষ্টা খুবই ক্ষীণ।
advertisement
স্থানীয় কৃষক আব্দুল ভৌমিক বলেন, “ধান কেটে জমিতে রেখেছিলাম। এভাবে হঠাৎ বৃষ্টি এসে সব ডুবিয়ে দেবে ভাবিনি। এখন যদি ধান পচে যায় বা অঙ্কুরিত হয়, তাহলে সারা বছরের পরিশ্রম মাঠে মারা যাবে। সার, বীজ, মজুরি- সব খরচই বৃথা যাবে।” আরেক কৃষক বিশাল সরকার ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠে জানান, “আমরা তো অপেক্ষা করছিলাম দু’দিন শুকনো আবহাওয়া হবে, তারপর ধান ঘরে তুলব। কিন্তু এই হঠাৎ বৃষ্টিতে সব শেষ। জমিতে হাঁটু জল, ট্র্যাক্টর ঢুকছে না, ধান তুলব কীভাবে?”
চোপড়া ব্লকের ঘিরনিগাঁও, লাহুতারা ও আমগাছ এলাকাতেও একই চিত্র বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। অনেক কৃষকই জানান, যদি আগামী এক-দু’দিনের মধ্যে জল না নামে, তাহলে পাকা ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ধান বেশি সময় জলে থাকলে অঙ্কুরিত হয়ে যায়। ফলে তা আর বিক্রির উপযোগী থাকে না। কৃষকদের দাবি, প্রশাসন দ্রুত ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে সহায়তার ব্যবস্থা করুক। অনেকেরই এখন চিন্তা, এই ক্ষতির পরে কীভাবে সংসার চলবে, পরের মরসুমের চাষের খরচই বা কোথা থেকে আসবে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
চোপড়ার মাঠে এখন কেবল জলে ভেসে থাকা ধানগাছ নয়, ভেসে রয়েছে চাষিদের স্বপ্ন, সারা বছরের পরিশ্রম, ঘাম ও আশা। সবকিছু যেন একদিনের বৃষ্টিতে জলের তোড়ে ভেসে গেল। প্রকৃতির এই খেয়ালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মুখে এখন শুধু হতাশার ছায়া। তাঁদের একটাই আর্জি, প্রশাসন দ্রুত ক্ষতির পরিমাণ মূল্যায়ন করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিক। নাহলে এই ভরাডুবি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে। চোপড়ার ধানক্ষেতের মতোই ভিজে আছে কৃষকদের মন। আকাশের দিকে তাকিয়ে তাঁদের শুধু প্রার্থনা, এমন বৃষ্টি যেন আর না নামে, যা স্বপ্নকেও ডুবিয়ে দেয়।





