মাত্র ২৪ বছর বয়সি এই শিল্পী সম্প্রতি ভারতের সিনিয়র ন্যাশনাল স্কলারশিপ (তবলা বিভাগে) অর্জন করেছে, যা উত্তরবঙ্গের জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্য। এর আগে তবলা বিভাগে এই অঞ্চলের কেউ এই সম্মান পাননি। গোটা পশ্চিমবঙ্গ থেকেও এবার এই বিভাগে মাত্র চারজন নির্বাচিত হয়েছেন — মিঠুন তাদের একজন।
advertisement
ছোটবেলা থেকেই তবলার প্রতি গভীর ভালবাসা। গত ৮ বছর ধরে তবলা শিখছে শ্রদ্ধেয় গুরু পণ্ডিত শ্রী সুবীর অধিকারীর কাছে। পাশাপাশি ৯ বছর ধরে কত্থক নৃত্যের তালিম নিচ্ছে কলকাতার পন্ডিত শ্রী সন্দীপ মল্লিকের কাছে। গুরুরা যেমন আগলে রেখেছেন, তেমনই মা-বাবার উৎসাহই মিঠুনের সবচেয়ে বড় ভরসা।
মিঠুন শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্যও বাজিয়ে চলেছে সাফল্যের তাল। ফারাবারির ‘উদার’ নামের একটি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কেন্দ্রের প্রায় দেড়শ বাচ্চাকে সপ্তাহে চারদিন তবলা আর নাচ শেখায় সে। এই অনুশীলন শুধু ক্লাস নয় বিশেষ শিশুদের মনেও মিঠুন ছড়িয়ে দেয় সাহস আর স্বপ্ন।
গত বছর সেন্টার ফর কালচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড ট্রেনিং-এ সিনিয়র ন্যাশনাল স্কলারশিপের জন্য অনলাইনে পরীক্ষা দেয় মিঠুন। গোটা দেশ থেকে প্রায় ৩০০ জন তবলা বিভাগের প্রতিযোগীর ভিড়ে ১৩ মিনিটের পরিবেশনায় বিচারকদের মুগ্ধ করে সে। সবচেয়ে বড় কথা, মিঠুন বাজিয়েছিল তার গুরুর নিজের কম্পোজিশন করা তবলার পেশকার যা বিচারকদের আরও মুগ্ধ করে।
এত প্রতিযোগীর মধ্যে নিজের নাম রাজ্যের শীর্ষে তুলতে পেরে নিজেই কিছুটা অবাক মিঠুন, তবে বিশ্বাস রেখেছিল গুরুর সুরে আর নিজের পরিশ্রমে। এই স্কলারশিপের ফলে দু’বছর ধরে প্রতি ছয় মাস অন্তর গুরুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণের অগ্রগতি রিপোর্ট দিতে হবে কেন্দ্র সরকারকে, আর প্রতি বছর ৬০ হাজার টাকা অনুদান পাবে সে যেটা শিল্পীজীবনের নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
গুরু পণ্ডিত সুবীর অধিকারীর কথায়, “দুই বছর আগে আমার এক ছাত্র জুনিয়র ন্যাশনাল স্কলারশিপ পেয়েছিল, এবার মিঠুন সিনিয়র ক্যাটেগরিতে উত্তরবঙ্গের প্রথম প্রতিনিধি। এর থেকে বড় গর্ব আর কী হতে পারে”।
মিঠুন এখন স্বপ্ন দেখে তবলা ও কথককে আরও বড় মঞ্চে পৌঁছে দিতে। নিজের শিল্পীজীবন গড়ে তোলার পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ ও দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তার পাথেয়। তবলার তালে আর কথকের ছন্দে হয়ত একদিন এই শিলিগুড়ি ছেলেই দেশের সাংস্কৃতিক মানচিত্রে আরও উজ্জ্বল এক চিহ্ন হয়ে উঠবে এটাই শিলিগুড়ি শহরের প্রার্থনা।
ঋত্বিক ভট্টাচার্য