আরও পড়ুন: কোকিল ডাকছে নাকি অমৃতাভ হরবোলা ধরতে পারবেন না!
তিনি অবশ্য পারিশ্রমিকের আশাও করেন না। তাঁর কথায়, ছেলেমেয়েগুলো আমার অক্সিজেন। ওরা মানুষ হলেই আমার শ্রম সার্থক।’ তিনি বালুরঘাটের বিশিষ্ট কবি’ও। ৭৫ বছর বয়স পেরোলেও এখনও নিয়মিত স্কুলে গিয়ে শিশুদের পড়ান মৃণালবাবু। একসময় নিজে হাতে গ্রামেই পৈতৃক জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকে এখনও বালুরঘাটের দুর্লভপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পড়াচ্ছেন। শিক্ষার জন্য নানা কাজ করে চলেছেন। স্কুল চত্বরেই নিজের হাতে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ও বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি গড়েছেন।
advertisement
মৃণালবাবু বলেন, ওই স্কুলটাই আমার প্রাণ। ওই স্কুলের জন্যই সবকিছুই ছেড়েছি। আমি এখনও ওই স্কুলে সপ্তাহে অন্তত চারদিন যাই। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাই। মাঝেমধ্যেই পড়াই। স্কুলে না গেলে আমার ভাল লাগে না। ওই স্কুলই আমার অক্সিজেন। শিশুদের কাছে পেলেই আমি আমার প্রাণ খুঁজে পাই। তাই স্কুলের খুদে ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করতে পারলে আমার খুব ভাল লাগে।
এমনকি স্কুলের ক্লাসরুমের দেওয়ালে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কোন ক্লাসে স্বরচিহ্ন, কোন ক্লাসে বিবর্তনের চিত্র। এমনকি ছড়া লিখে একেবারে শিশুদের উপযোগী করে তুলেছেন। স্কুলে ভয়ের পরিবেশ কাটাতে স্কুলের প্রাচীরের দেওয়ালে, ক্লাসরুমের দেওয়ালে নানা রঙের ছবি আঁকেন। ছড়া, সহ পঠনপাঠনের নানা ছবি নিজে হাতে আঁকেন। শুধু তাই নয়, ছোটবেলা থেকেই মূর্তি গড়ার কাজও তিনি পারতেন। তাই নিজের স্কুলেই প্রথমে নিজের হাতেই কংক্রিটের রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি গড়েন।
এই বিষয়ে বালুরঘাট ব্লকের বোয়ালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্লভপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানস মীর বলেন, মৃণালবাবুর দেখানো আদর্শেই আমরা স্কুল চালাচ্ছি। তিনি এখনও স্কুলে আসেন। আমাদের পথ দেখান। উনিই আমাদের অভিভাবক।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
একসময় দুর্লভতম গ্রাম অত্যন্ত দুর্গম জায়গা ছিল। সেখানে শিক্ষার আলো পৌঁছাত না। ফলে গ্রামে শিক্ষার অন্ধকার দূর করতে মৃণাল চক্রবর্তী সহ আরও তিনজন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃণালবাবুর পৈতৃক জমিতেই গড়ে তোলা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই থেকেই স্কুলেই পড়াতেন মৃণালবাবু। গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের এনে জোর করে স্কুলে পাঠ দিতেন। পরবর্তীতে অবশ্য সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয় ওই স্কুলকে। মৃণালবাবুই ২০১০ সাল পর্যন্ত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। অবসর নেওয়ার পরেও একইভাবে শিক্ষাদান করে যাচ্ছেন তিনি। বিবেকানন্দ ও বিদ্যাসাগরের মূর্তি গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি ক্লাসরুমকে তিনি আলাদা আলাদা ভাবে গড়ে তুলেছেন। বিশেষ রুপ দিয়েছেন স্কুলকে। স্কুল না, যেন এক একটি শিশু উদ্যান। শুধু শিক্ষা জগতেই নয়, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতেও জেলার বুকে অন্যতম জায়গায় করে নিয়েছেন মৃণালবাবু। কবি চক্রবর্তী ছদ্মনামেও তিনি বহু উপন্যাস লিখেছেন।
সুস্মিতা গোস্বামী