নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত বিতর্ক ও পুশব্যাকের অভিযোগের মধ্যে অবশেষে দেশে ফেরার পথ খুলল বীরভূমের পাইকর এলাকার বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনের। বাংলাদেশের আদালত সোনালি খাতুন, সুইটি বিবি-সহ মোট ছ’জনকে জামিন দেওয়ার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের চাঁপাই নবাবগঞ্জ সংশোধনাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সোনালি ও তাঁর আট বছরের ছেলে ইতিমধ্যেই ফিরে এসেছেন, বাকিদের আইনি প্রক্রিয়া চলায় তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
advertisement
লক্ষণ দেখেও ফেলে রাখার ফল! ফুসফুসের ক্যানসার কখন ধরা পড়লে সারে? জানাচ্ছেন চিকিৎসক
সোনালিদের নাগরিকত্ব নিয়ে চলমান বিতর্ক এ দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছিল। গত সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে মানবিকতার খাতিরে সোনালিদের দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিল। অন্তঃসত্ত্বা সোনালি ও তাঁর আট বছরের সন্তানের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বহরমপুরের সভা থেকে তিনি বলেন, “সোনালি খাতুনকে ছোট ছোট বাচ্চা-সহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম, কোর্ট বলেছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”
ঘটনার সূত্রপাত গত জুনে। অভিযোগ, দিল্লিতে কর্মরত সোনালি খাতুন, সুইটি বিবি-সহ ছ’জনকে বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও পাইকর এলাকা থেকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়। পরে ২০ অগস্ট চাঁপাই নবাবগঞ্জের পুলিশ তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আটক করে এবং মামলা রুজু হয়। সেই থেকেই তাঁরা সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন।
এই পুশব্যাকের বিরুদ্ধে সোনালির বাবা ভদু শেখ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন, দাবি করেন তাঁর মেয়ে ভারতীয় নাগরিক এবং সমস্ত প্রামাণ্য নথি রয়েছে। সোমবারের শুনানিতে কেন্দ্র সরকার সময় চাইলে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত জানান, “মানবিকতার দিক মাথায় রেখে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান থাকা উচিত ছিল।” বেঞ্চ আরও নির্দেশ দেয়—সোনালিদের ভারতে ফেরার অনুমতি দিতে হবে, প্রয়োজনে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা ও নজরদারিতে রাখার ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “মানবিক বিষয় আমরা বুঝি, তবে এই ধরনের ঘটনার নজিরও মাথায় রাখতে হয়।”
ভদু শেখের পক্ষ থেকে জানানো হয়—যেহেতু সোনালি অন্তঃসত্ত্বা এবং তাঁর সঙ্গে আট বছরের ছেলে রয়েছে, তাই মাকে ফিরিয়ে আনলে সন্তানকেও আনতেই হবে। আদালত সেই যুক্তি গ্রহণ করে জানায়, বুধবার আবার শুনানি হবে।
উল্লেখ্য, ২৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সোনালি-সহ ছ’জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে ভারতে ফেরাতে হবে। কিন্তু তার আগেই কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায়। গত শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট সোনালির ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণকে গুরুত্ব দিয়ে বলে, “জন্ম শংসাপত্র, আত্মীয়দের সঙ্গে থাকা—এসবই প্রমাণ। অভিযোগ, তাঁদের বক্তব্য না শুনেই পাঠিয়ে দিয়েছেন।” সব মিলিয়ে আদালত, পরিবার ও মানবিকতার চাপে অবশেষে দেশে ফিরতে পারলেন সোনালি।