উত্তরবঙ্গের প্রাচীন জনজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ধীমাল জনজাতি। মায়ানমার থেকে আসাম হয়ে তরাই অঞ্চলে প্রবেশ তাদের। সর্বশেষ সমীক্ষায় তাদের সংখ্যা সবমিলিয়ে ধরা পড়েছে মাত্র এক হাজারের সামান্য কিছু বেশি। তাও তাদের অস্তিত্ব শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি ব্লক মিলিয়ে মাত্র কয়েকটি গ্রামেই রয়েছে। এত কম জনসংখ্যার পরেও পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে তারা কোনও চাপ তৈরি করছেন না। কারণ তাদের যুক্তি, পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হলে বা জন্ম হার বেশি হলে শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগবে। শিশুদের সঠিক লেখাপড়া হবে না। ফলে সমস্যা আরও বাড়বে। এই ধীমাল জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোর প্রায় প্রত্যেকেই আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর।
advertisement
আরও পড়ুন: দুধ পুলি থেকে পাটিসাপ্টা..! মিড ডে মিলে ‘সারপ্রাইজ’! পড়ুয়াদের পেটে পড়ল ‘পিঠে’!
শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়ি থানার কেটুগাবুরজোত এমন একটি গ্রাম, যেখানে ধীমালরাই বেশি সংখ্যায় রয়েছেন। এই ধীমালদের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। এখন অবশ্য কিছু কিছু লোক অফিসে চাকরি করেন। নকশালবাড়ির ওই কেটুগাবুরজোত গ্রামে তাদের সংখ্যা ৫৫০ জন। এখন তাদের মধ্যে কলেজ পাশ করা মানুষের সংখ্যা ৫ জন। আর মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মানুষের সংখ্যা ১২ জন। ধীমালদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে বহু কিছু হারিয়ে যেতে বসেছে। কেটুগাবুরজোত গ্রামের স্কুল শিক্ষক গর্জেন কুমার মল্লিক সেদিক থেকে ধীমাল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে এক নতুন দিশা।
আরও পড়ুন: বাচ্চা হলেই গুণতে হবে মোটা টাকা!গুরুতর অভিযোগ বাংলার এই হাসপাতালে,কী ঘটছে জানুন
১৯৮৩ সালে শিলিগুড়ি কলেজ থেকে বায়োসায়েন্স নিয়ে স্নাতক হন গর্জেনবাবু। এখন তিনি পানিঘাটা হাইস্কুলের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক। শিক্ষা বিস্তার ছাড়াও তিনি ধীমাল সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে একটি দল গঠন করেছেন। ধীমাল জাতি অস্তিত্ব রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক তিনি। এখন তারা কেন্দ্র সরকারের কাছে তাদের সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার দাবি করছেন। গর্জেনবাবু বলেন, “স্বাধীনতার আগেও আমরা ছিলাম তফসিলি উপজাতি। আর এখন আমরা ওবিসি। এটা কেন হবে?”এছাড়াও ধীমালদের বহু পুরোনো অনেক বাদ্যযন্ত্র রয়েছে। যেমন তুনজাই, গুমনা, ঢোল, চুঙ্গা মের্দং, মর্চুংয়া। এসব বাদ্যযন্ত্র সাধারণত বাঁশ দিয়েই তৈরি। সেসবও হারিয়ে যেতে থাকায় গর্জেনবাবু বাঁচানোর কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। নতুন ছেলেমেয়েদের তিনি সেসব তৈরি ও বাজানোর কায়দাও শিখিয়ে চলেছেন। আবার নিজেও কিছু গান রচনা করে ধীমাল ভাষায় সুর দিয়েছেন।
অনির্বাণ রায়





