পৃথিবা কুমার জিসি মেমোরিয়াল হাই স্কুল ও পার্শ্ববর্তী রাধারাণী গার্লস হাই স্কুলের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াতের পথে একবার হলেও ঢু মেরে যান লোকনাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারে। উদ্দেশ্য একটাই, সাধ্যমত টিফিনের টাকা দিয়ে এক টাকার সিঙ্গারা খাওয়ার। কেউ কিনছেন পাঁচটি কেউ আবার দশটি। এভাবেই প্রতিদিন প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ সিঙ্গারা বিক্রি করেন দোকান মালিক বছর ৬৩ পরিমল দাস। ২০০০ সালে এই দোকানটি খুললেও তেমনভাবে সাফল্য মেলেনিন। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে তিনি পরবর্তী সময়ে চালু করেন টাকার এই সিঙ্গারা। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে ভিড় জমতে থাকে দোকানে। পরিমল বাবুর কথায়, এক টাকার সিঙ্গারা বন্ধ করলেই তার দোকানে আসেন না কোনও ক্রেতা।
advertisement
আরও পড়ুন : শহিদ দিবসের প্রস্তুতি চরমে, ২১ জুলাইয়ের আগে কর্মীদের পাঞ্জাবি উপহার অভিষেকের!
তাই বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে এই এক টাকার সিঙ্গারা-ই ইউএসপি হয়ে দাঁড়িয়েছে পৃথিবা মোড়ের লোকনাথ মিষ্টান্ন ভান্ডারের। সকাল ৭ টা নাগাদ দোকানে এসে শুরু হয় প্রস্তুতি। নিজেই তৈরি করেন বিভিন্ন উপকরণ। অতীতে টিনের চালের ছাউনি দিয়ে দোকানটি কোনরকম তৈরি করলেও, বর্তমানে ব্যবসায় সাফল্য মেলায় পাকা দালান উঠেছে। ২২ বছরের দোকানে ছাত্র ছাত্রীরাই প্রাণ হয়ে উঠেছেন এক টাকার সিঙ্গারা দাদুর। তাদের জন্যই বেঁচে আছে দোকানটি অকপট স্বীকারোক্তি বিক্রেতা পরিমল দাসের। এক টাকার সিঙ্গারা ছাড়াও মেলে নানা ধরনের মিষ্টি, গজা লাড্ডু সন্দেশ সহ কোল্ডড্রিংস। তবে এক টাকার সিঙ্গারার জন্যই কচিকাচাঁদের ভিড় হয় দোকানে, আর তাই বাকি আইটেম গুলোও কিছুটা হলে বিক্রি হয় বলেই, কাজের ফাঁকে জানালেন এক টাকার সিঙ্গারা দাদু।
আরও পড়ুন West Burdwan News: সরস্বতীর বরপুত্র, ভারতের সবচেয়ে খুদে বিজ্ঞানী ফিরিয়েছে নাসা-হার্ভার্ডের ডাক!
ছোট ছোট বেলি করে, তার মধ্যে পুর ভরে তৈরি হয় এই সিঙ্গারা। তারপর ভাজা হয় ছাকা তেলে। স্কুল ছুটি বা টিফিন টাইমে যখন অতিরিক্ত ভিড় বেড়ে যায় সেই সময় দোকান সামাল দেওয়ার জন্য ডাক পরে স্ত্রী জ্যোৎস্না দেবীর। এই দোকানে থেকে উপার্জন করেই এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ও ছেলেকে পড়াশোনা চালিয়েছেন বলেই জানালেন দাস দম্পতি। এই এক টাকার সিঙ্গারা জনপ্রিয়তা লাভ করতেই, সারাদিনই প্রায় ভিড় লেগে থাকে দোকানের সামনে। এক টাকার সিঙ্গারাকে সামনে রেখে, পরিমল বাবুর এই ইউএসপি তৈরির বিষয়টিকে রীতিমত কুর্নিশ জানাচ্ছেন অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও। এই এলাকা দিয়ে যাতায়াতকারী নিত্যযাত্রী থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও তাই মজে আছেন এক টাকার মুখরোচক সিঙ্গারায়। হাবড়া ছাড়িয়ে এক টাকার সিঙ্গারা এখন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে জেলা জুড়ে। বহুদূর দুরন্ত থেকেও মানুষ এই এক টাকার সিঙ্গারা খাওয়ার লোভে আসছেন পরিমল বাবুর দোকানে।
প্রতিবেদক - রুদ্র নারায়ণ রায়