আসলে ওরা কাজ করে। যদিও বিজ্ঞানের আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিত্য নতুন মেশিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত তাঁতশিল্প। তবুও ওরা হাল ছাড়েনি, তাই ওরা কাজ করে। যন্ত্রের দাপটে কোণঠাসা হতে হতে আর আগের মত পসার নেই। উপার্জন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তবু পেটের টানে সেই পুরনো তাঁতকেই আঁকড়ে ধরে আছেন বসিরহাটের দালাল পাড়ার তিন নম্বর কলোনির বাসিন্দারা।
advertisement
এই এলাকায় গেলে এখনও তাঁত চলার খটাখট শব্দ পাওয়া যাবে। যদিও আগের মত আর কাজের বরাত নেই। কিন্তু গরিব মানুষগুলো আর করবেনটাই বা কী? এই তাঁতি কলোনিতে বসবাস করা ২০-৩০ টি পরিবারই তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল। এই করেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদের তাঁদের সংসার চলে। তবে মেশিনে শাড়ি তৈরির বিষয় আরও বেড়ে যাওয়ায় হাতে টানা তাঁতের কদর যে কমেছে তা তাঁরাও বোঝেন। তার ওপর সমস্ত উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কায় সত্যিই আর পেরে উঠছে না মানুষগুলো।
আরও পড়ুন: প্রাচীন ভারতে শুরু এই খেলা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে, কিন্তু আঁতুড়ঘরেই হারিয়ে যাবে সে!
এক সময় এই হস্তচালিত তাঁত শিল্প প্রায় বন্ধের মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। যদিও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় মৃত সঞ্জীবনীর মতো তা আবার জেগে উঠেছে। তবে হস্তচালিত তাঁত শিল্প বেঁচে থাকলেও তাতে যেন বড়ই প্রাণের অভাব। বসিরহাটের তাঁত শিল্পী দীনবন্ধু দেবনাথ বলেন, "আমাদের উৎপন্ন হস্তশিল্প চালিত তাঁতের কাপড়গুলি তন্তুশ্রীর মাধ্যমে কলকাতাতে চলে যায়। বর্তমানে সমস্ত জিনিসপত্রের দাম ও পরিবহণ খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে সব কিছুর সামলে আমাদের মুনাফা করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও যারা ঐতিহ্যের তাঁত আঁকড়ে বেঁচে আছেন সকলেই সমস্বরে জানালেন, তাঁদের দিন চলে যায়, কিন্তু পেট চলে না! সব মিলিয়ে সরকারি সহযোগিতা সত্ত্বেও ক্রমশই গহীন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে বসিরহাটের দালাল পাড়ার তিন নম্বর কলোনির তাঁত শিল্পীদের জীবন!
জুলফিকার মোল্লা