তাই এবারের বারাসতের শ্যামা পূজাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন ক্লাব গুলি। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে প্রশাসন। প্রতি বছরের মতো এবছরও প্রায় লক্ষাধিক দর্শনার্থী বারাসতের কালী পুজো দেখতে উপস্থিত হবেন বলেই অনুমান করা হচ্ছে প্রশাসন সূত্রে। তবে এবছর কালীপুজোর কে সামনে রেখে প্রতিমা থেকে মন্ডপসজ্জা ও থিমের দৌড়ে বারাসতের সেরা পুজো হিসেবে দর্শকদের বিশেষ নজর থাকবে এই পুজো গুলির উপর বলেই মনে করা হচ্ছে। এখনো বারাসতের কোনো ক্লাবই তাদের চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনার কথা সেভাবে সামনে না আনলেও, আমাদের দর্শকদের জন্য বারাসাতের সেরার সেরা পুজো গুলির পরিকল্পনা তুলে ধরা হল।
advertisement
প্রথমেই আসা যাক বারাসতের অতি পরিচিত পাইওনিয়ার পার্ক এর শ্যামা পূজার কথায়। প্রতিবছরই একটু নতুন কিছু চিন্তা-ভাবনা ফুটে উঠতে দেখা যায় এই ক্লাবের পূজোয়। ক্লাব সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার তাদের চিন্তা ভাবনায় ধরা দিতে চলেছে সুদূর সাউথ আফ্রিকার মরক্কো কসবা টাওয়ার। ফলে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে নজরে থাকবে এই ক্লাবের পুজো বলেই মনে করা হচ্ছে। এরপরই আসছে বারাসত কে এন সি রেজিমেন্ট এর পুজো। প্রতিবছরই দর্শনার্থীদের নজরে থাকে এই ক্লাব। জানা গিয়েছে, এবছর এই ক্লাবের চিন্তাভাবনায় আলোর খেলায় ভিশাক মেলায় শ্রীলংকার ভিশাক ফেস্টিভ্যাল এর অনুকরণে তৈরি করা হবে। যেখানে মানুষ এসে আনন্দের পাশাপাশি উপভোগ করতে পারবেন সেই দেশের শিল্প সংস্কৃতি। কর্নাটকের সুখ প্রাচীন ও জাগ্রত কোটি লিঙ্গেশ্বর শিব মন্দির উঠে আসবে নবপল্লী বয়েজ স্কুল আমরা সবাই ক্লাব এর শ্যামা পূজোর মণ্ডপসজ্জার থিম হিসেবে। ফলে নজর থাকবে এই ক্লাবের দিকেও।
আরও পড়ুনঃ মেলেনি শিল্পী ভাতা! হরিনাম সংকীর্তন কে বাঁচিয়ে রাখতে আবেদন শিল্পীদের
নবপল্লী অ্যাসোসিয়েশনের এবারের ভাবনায় উঠে আসছে কেদারনাথ মন্দির। উচ্চতার কারণে অনেকেই যেখানে পৌঁছতে পারেন না সেই তীর্থস্থানকেই হুবহু রূপ দেওয়া হবে এখানে। বয়স্ক মানুষরাও অনায়াসে দর্শন করতে পারবেন বাবা কেদার ধাম। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বারাসত সন্ধানী ক্লাব এবার শ্যামা মাকে আনছে লিফটে করে। পুজো কমিটির তরফ থেকে অবশ্য এর থেকে বিশদে এখনই বেশি কিছু জানানো হয়নি। তবে বিশেষ চমক অপেক্ষা করছে এই পুজোর ক্ষেত্রেও বলেই মনে করা হচ্ছে। বারাসতের ন'পাড়া ওয়েলফেয়ার এর এবারের চিন্তা ভাবনায় উঠে আসছে দূষণ। বিভিন্নভাবে চারপাশের সমাজ দূষিত হচ্ছে। তার দায় থেকে অস্বীকার করার উপায় নেই মানবজাতিরও। সেই দূষণের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে এই পূজা মন্ডপের থিমের মধ্যে দিয়ে বলে জানা যাচ্ছে।
বারাসত আগুয়ান সংঘের শ্যামা পুজো এবার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে পদার্পণ করল। তাই তাদের পরিকল্পনা এবার সবচেয়ে বড় কালী মূর্তির। ক্লাব সূত্রে খবর, প্রায় ৫০ ফুটের অধিক হতে পারে এখানকার মা কালীর প্রতিমা। হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব পাশাপাশি বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহ নানান ভাবে সর্বনাশ নেমে আসছে শৈশবে। সেই চিন্তা ভাবনাকেই ফুটিয়ে তোলা হবে কালিকাপুর যুবগোষ্ঠী এবারের শ্যামা পূজোর থিম হিসেবে। হলে শিশুদের জন্যও এক বার্তা উঠে আসবে এই পুজোর পরিকল্পনা থেকে বলেই মনে করা হচ্ছে। বারাসত মৎস্য আরত কল্যাণ সমিতি এবছর পাহাড়ের ভিতর মুক্তর মাতৃ প্রতিমা তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আর সেই লক্ষ্যেই সেজে উঠছে তাদের মণ্ডপ।
আরও পড়ুনঃ পুলিশি অভিযানের পরও জেলায় চলছে দেদার শব্দবাজি বিক্রি!
দর্পণের প্রতিবিম্বের নানান খেলা উঠে আসবে এবছর বারাসত নোয়াপাড়া সংহতি ক্লাব এর কালীপুজোয়। আয়না ব্যবহার করেই তৈরি হবে মণ্ডপ বলেই জানা যাচ্ছে। টাকি রোড বামুনমুড়া অ্যাসোসিয়েশন ক্লাব এবছর ফুটিয়ে তুলছে নেপালের বৌদ্ধ মন্দির। যা এ বছরের শ্যামা পূজোর অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলেই উদ্যোগ তারা মনে করছেন। তবে প্রশাসনের বেশকিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, যার মধ্যে জানা যাচ্ছে এবছর কোন পুজো মন্ডপ কোনরকম গেস্ট বা ভিআইপি কার্ড ইস্যু করতে পারবে না। তাই সব মিলিয়ে সেরা পুজো গুলি দেখতে অবশ্যই আসতে হবে জেলা সদর বারাসাতে। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লাবগুলিতেও চলছে শ্যামা পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। কে কাকে টেক্কা দেয় এখন সেটাই দেখার। আর তার জন্য অপেক্ষা আর মাত্র কয়েকদিনের।
Rudra Narayan Roy