ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ যতই এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে উত্তেজনা। এর মাঝেই ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যদি তাদের উপর কোনও রকম সামরিক চাপ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তাহলে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে। আর এই সিদ্ধান্তই ভারতের দুশ্চিন্তার মূল কারণ।
advertisement
হরমুজ প্রণালী কী?
হরমুজ প্রণালী হল একটি অত্যন্ত সংকীর্ণ সমুদ্রপথ, যা ইরান এবং ওমানের মধ্যে অবস্থিত। এটি পারস্য উপসাগরকে আরব সাগর এবং ওমান উপসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। এই প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ২১ মাইল চওড়া। পৃথিবীর মোট জ্বালানি তেলের প্রায় ২০–২৫ শতাংশ এখান দিয়ে সরবরাহ হয়।
২০২৩ সালের হিসেবে, এই প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১.৭ কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ হয়। সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কাতার এবং ইরান—এই সব দেশের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস এখান দিয়েই যায়। কাতার, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় LNG সরবরাহকারী দেশ, তারও সমস্ত জ্বালানি পণ্য এই পথেই যায়।
হরমুজ প্রণালী কী এবং এটি বন্ধ হলে ভারতের কী ক্ষতি হতে পারে, জেনে নিন!
ভারতের উপর কী প্রভাব পড়বে?
ভারত তার মোট অপরিশোধিত তেলের চাহিদার প্রায় ৮৫% আমদানি করে, যার বেশিরভাগ আসে পারস্য উপসাগরের দেশগুলি থেকে। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে এই তেল সরবরাহ ব্যাহত হবে। এর ফলে ভারতে তেলের অভাব দেখা দেবে, জ্বালানির দাম বাড়বে, সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ পড়বে এবং মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) বাড়বে।
মূল প্রভাবগুলি:
🔸 তেলের দাম বেড়ে যাবে: পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম বাড়বে।
🔸 ট্রান্সপোর্ট ও শিল্প খরচ বাড়বে: যার ফলে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।
🔸 বাণিজ্য ঘাটতি (Trade Deficit) বাড়বে: আমদানির খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
🔸 রফতানি সমস্যায় পড়বে: সৌদি, ইউএই-এর মতো দেশে যেসব জিনিসপত্র রফতানি হয় (যেমন: চাল, ওষুধ, বস্ত্র), তাও সমস্যায় পড়বে।
🔸 GDP কমতে পারে: উৎপাদন ব্যাহত হলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতি কমবে।
🔸 ডিপ্লোম্যাটিক চাপ বাড়বে: ভারত যেহেতু ইরান-ইজরায়েল উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখে, তাই ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে উঠবে।
একটা ছোট্ট জলপথ, আর তাতেই কেঁপে উঠতে পারে ১৪০ কোটির দেশ!
ভারতের করণীয় কী?
✅ অস্থায়ীভাবে স্ট্র্যাটেজিক তেল রিজার্ভ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সেটা কয়েক মাসের জন্যই যথেষ্ট।
✅ রাশিয়া, নাইজেরিয়া, ভেনেজুয়েলার মতো দেশ থেকে আমদানির চেষ্টা বাড়াতে হবে, যদিও সেগুলি বেশি দূরে, ফলে খরচ ও সময় বাড়বে।
✅ সৌর, বায়ু এবং অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির উপর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
✅ কূটনৈতিকভাবে ইরান, সৌদি আরব ও ইজরায়েলের সঙ্গে আলোচনা জোরদার করতে হবে, যাতে যুদ্ধের আগুন ভারত পর্যন্ত না পৌঁছায়।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে ভারতীয় অর্থনীতি, শক্তি নিরাপত্তা এবং সাধারণ জীবনযাত্রা ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই শুধু যুদ্ধ নয়, এই মুহূর্তে পুরো বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গে ভারতও দম আটকে অপেক্ষা করছে—ইরান শেষমেশ কী সিদ্ধান্ত নেয়।একটা ছোট্ট জলপথ, আর তাতেই কেঁপে উঠতে পারে ১৪০ কোটির দেশ!