রাজ্যসভায় সাংসদ উল্লেখ করেন যে, তিস্তা নদী পশ্চিমবঙ্গের চারটি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাই তিস্তা জলবণ্টন ও ফরাক্কা চুক্তি নিয়ে যেকোনও আলোচনার আগে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতামত গ্রহণ করা উচিত, কারণ এই ধরনের চুক্তিগুলি রাজ্যের জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
চেয়ারম্যানের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপনার মাধ্যমে, আমি কেন্দ্রকে অনুরোধ করছি যে, তিস্তার জল বাংলাদেশে ছাড়ার বিষয়ে এবং ভারত-বাংলাদেশ ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণ সংক্রান্ত শর্তাবলির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করা হোক।”
advertisement
তিনি আরও বলেন, তিস্তায় জলের প্রবাহ কমে গেলে উত্তরবঙ্গের কৃষি-সেচ ব্যবস্থা ও পানীয় জলের চাহিদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই কারণে তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়, কারণ এটি উত্তরবঙ্গের কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় আরও উল্লেখ করেন যে, ফরাক্কা ব্যারাজের মাধ্যমে জল সরিয়ে নেওয়ার ফলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা সংকটে পড়েছে এবং সুন্দরবন ব-দ্বীপের পলির স্তর কমে যাওয়ায় এর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ ফরাক্কা চুক্তি নবীকরণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে, যার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এটি আমাদের রাজ্যের জনগণের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব ফেলবে। ফরাক্কা ব্যারাজে জলপ্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়ার ফলে কলকাতা বন্দরে নৌ-পরিবহনে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টিগোচর করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নদীগুলির প্রাকৃতিকভাবেই পরিবর্তন ঘটছে, যার ফলে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জল সংকটে ভুগছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং তাদের জীবিকা হারিয়েছেন। হুগলি নদীতে পলির স্তর হ্রাস পাওয়ায় আমাদের সুন্দরবন ব-দ্বীপের পুষ্টিচক্রও ব্যাহত হয়েছে।”
আরও পড়ুন: মেরঠ হত্যাকাণ্ডের জের, নীল রঙের ড্রাম কিনতেই চাইছেন না! কেউ, মেরঠে ‘লাটে’ ড্রাম ব্যবসা
এই প্রসঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ ভারত-ভুটান নদী কমিশন গঠনেরও দাবি জানান। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভুটান থেকে প্রবাহিত আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির আকস্মিক বন্যার কারণে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। তাই এই জলসম্পদগুলির যৌথ ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন: সাহিলের জন্মদিনের পার্টিতে কেকের উপর লেখা ‘শঙ্কর’! তবে আরও কোনও ব্যক্তির যোগ রয়েছে?
তিনি বলেন, “মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনিয়ে তিনবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে, ফরাক্কা ব্যারাজের কারণে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক বন্যা ও ভাঙনের ঘটনা ঘটছে। তিস্তা নদীর জলপ্রবাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে এবং অনুমান করা হচ্ছে, যদি এই জল বাংলাদেশকে দেওয়া হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গের লক্ষ লক্ষ মানুষ সেচের জলের অভাবে চরম সমস্যায় পড়বেন। তিস্তা নদীর জল উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই তিস্তার জল বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব নয়।”