TRENDING:

West Nile Virus|| কেরলে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের সংক্রমণ! মশাবাহিত এই রোগ চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে, জানুন বিশদে

Last Updated:

West Nile Virus|| চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এটি একটি মশাবাহিত, একক-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ ভাইরাস।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
সম্প্রতি ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে (West Nile Virus) আক্রান্ত হন কেরলের ত্রিশুরে ৪৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। গত ১৭ মে থেকে ওই ব্যক্তি জ্বরে ভুগছিলেন। সেই সঙ্গে দুর্বলতা, মাথা ব্যথার মতো অন্যান্য বেশ কিছু উপসর্গও ছিল। ত্রিশুরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজেই তাঁর শরীরে ওয়েস্ট নাইল ফিভার ধরা পরে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীনই তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর থেকে নড়েচড়ে বসেছে কেরালা প্রশাসন। নতুন এই ভাইরাসের মোমাবিলায় কেরালার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা অত্যন্ত সতর্কতা মানতে শুরু করেছে। কিন্তু কি এই নতুন ভাইরাস? যেখানে একের পর অজানা অসুখের মোকাবিলা রীতিমতো সকলের নাজেহাল অবস্থা, সেখানে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস আবার নতুন কোনও বিপদের সঙ্কেত নয় তো! কার্যত এই চিন্তাই চিকিৎসকদের কপালে ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছে। যদিও তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা নতুন নয়। কারণ এর আগে ২০১৯ সালে এই একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মালাপ্পুরম জেলার ছয় বছর বয়সী একটি ছেলে প্রাণ হারায়। এমনকী ভাইরাসটি প্রথম ২০০৬ সালে কেরলের আলাপুজা রাজ্যে এবং তারপর ২০১১ সালে এরনাকুলামেও পাওয়া গিয়েছিল।
Representative Image
Representative Image
advertisement

আরও পড়ুন: এক কথাতেই 'তেজ' বোঝালেন রোদ্দুর, কলকাতায় পা রেখেই বিস্ফোরক মন্তব্য! যা বললেন...

সংক্রমণের স্বরূপ কেমন?

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন এটি একটি মশা-বাহিত, একক-স্ট্র্যান্ডেড আরএনএ ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, এটি ফ্ল্যাভিভাইরাস জেনাসের সদস্য এবং চরিত্রগত দিক থেকে অনেকটাই ফ্ল্যাভিভিরিড পরিবারের জাপানিজ এনকেফালাইটিসের মতো। এই ভাইরাসটির প্রধানত পাখির শরীরে জন্ম হয় এবং এটির সংক্রমণের প্রধান ভেক্টর হল কিউলেক্স প্রজাতির মশা। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে সংক্রামিত মশা মানুষ এবং পশ-পাখিদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সংশ্লিষ্ট রোগটি কিউলেক্স প্রজাতির মশা থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায় এবং জাপানি এনকেফেলাইটিসের ক্ষেত্রেও একইরকম সংক্রমণ ছড়াতে দেখা যায়। পাখিরা ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের বাহক এবং ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করে। মূলত কিউলেক্স প্রজাতির অর্নিথোফিলিক মশা ভাইরামিক পাখি থেকে সংক্রমণের ভেক্টর হিসেবে কাজ করে। তবে একজন মানুষের থেকে আরেকজনের কিংবা প্রাণীর থেকে প্রাণী এবং পশুর থেকে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ভাইরাস সংক্রমণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন হায়দরাবাদের যশোদা হাসপাতালের সংক্রামক রোগের কনসালট্যান্ট ডা. মোনালিসা সাহু। তবে শুধু মানুষ নয়, অন্য স্তন্যপায়ীরাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। মশার কামড়ের পাশাপাশি রক্ত এবং টিস্যু থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস। সাধারণত ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস রক্ত ​​সঞ্চালনের মাধ্যমে, সংক্রামিত মায়ের থেকে তার সন্তানের মধ্যে বা পরীক্ষাগারে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ফলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে, সংক্রমিত ব্যক্তি কিংবা প্রাণীর সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাস ছড়ায় কি না সেবিষয়ে এখনও কোনোওতথ্য পাওয়া যায়নি।

advertisement

আরও পড়ুন: শুক্রবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ, নজরে রাখতেই হবে যে বিষয়গুলি...

ডা. সাহু এবিষয়ে আর বলেছেন যে ভাইরাসটি মশার ভেক্টরে বাড়ে এবং প্রায় ২ সপ্তাহের বাহ্যিক ইনকিউবেশন সমযয়ের পরে, ভেক্টরটি একটি বাহক হিসাবে সক্রিয় সংক্রমণের জন্য সংক্রামক হয়ে যায়। তিনি বলেন, "পরিযায়ী পাখিরা ডব্লুএন ভাইরাসের বিস্তারে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে সংক্রামিত মশার মাধ্যমে বা অবৈধভাবে আমদানি করা সংক্রামিত পোষা পাখির মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তারের বিষয়টিও সম্ভাব্য হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।"

advertisement

ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC) তথ্য অনুযায়ী , সংশ্লিষ্ট রোগটি পাখি সহ সংক্রামিত প্রাণী খাওয়ার মাধ্যমে ছড়ায় না। যদিও সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মাংস রান্না করা উচিত”। তবে এখনও পর্যন্ত সাধারণ মেলামেশার মাধ্যমে ডব্লুএনভি কোনও একজন মানুষের থেকে অন্যজনের সংক্রমণ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

advertisement

উপসর্গ কী?

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশের শরীরে এই রোগটি উপসর্গবিহীন ধরা পড়েছে। তবে কিছু রোগী গুরুতরভাবে ওয়েস্ট নাইল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এপ্রসঙ্গে তিনি জানান যে সাধারণত এই ভাইরাসের সংক্রমণে হালকা উপসর্গ থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া ভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময়সীমা ২ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে যেখানে ভাইরাসটি ইমিউনোকম্প্রোমাইজড অবস্থায় থাকে ২১ দিন। একইসঙ্গে এটি প্রাপ্তবয়স্ক এবং বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যদিও এই রোগটি কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা নিয়ে ইতিমধ্যে গবেষণা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মতে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তীব্র জ্বর থেকে শুরু করে নিউরোইনভেসিভ রোগ পর্যন্ত হতে পারে। ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অন্যান্য সাধারণ লক্ষণগুলি হল, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ফুসকুড়ি, জ্বর ইত্যাদি। এছাড়াও জয়েন্টে ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, চোখে ব্যথা, বমি কিংবা ডায়রিয়া, লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি, মেনিনগোয়েনসেফালাইটিস এবং সিএনএসের মতো লক্ষণগুলিও দেখা যায়। প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট ভাইরাসে আক্রান্তের শরীরের লক্ষণগুলি ভাইরাল মেনিনজাইটিসের মতো অর্থাৎ জ্বর, মাথাব্যথা এবং ফটোফোবিয়া ইত্যাদি হয়। আবার রোগের জটিলতা বাড়লে এনসেফালোপ্যাথি, কোমা এবং বিরল ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে বলে গবেষণায় ধরা পড়েছে।

advertisement

সিডিসির তরফে আরও জানানো হয়েছে যে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস ১৫০ জনের মধ্যে প্রায় ১ জনের শরীরে জটিল আকার নিতে পারে। সেক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস লেগে যেতে পারে। এমনকী ব্যক্তিবিশেষে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের উপর কিছু প্রভাব স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত কো-মর্বিডিটি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে রোগটি মারাত্মক আকার নিতে পারে।

শনাক্ত হয় কীভাবে ?

১৯৩৭ সালে ভাইরাসটি প্রথম উগান্ডার পশ্চিম নাইল জেলায় একজন মহিলার শরীরে দেখা গিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে ভাইরাসটি সনাক্ত করা হয়েছে। যেমন ১৯৫৩ সালে নীল ব-দ্বীপ অঞ্চলে পাখিদের বিশেষত কাক এবং পায়রা জাতীয় পাখির শরীরে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছিল। তবে ১৯৯৭ সালের আগে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস পাখিদের জন্য প্যাথোজেনিক হিসাবে গণ্য করা হয়নি। কিন্তু তার পরে আরও একটি মারাত্মক স্ট্রেনে ইজরায়েলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মৃত্যু হয়। এনকেফেলাইটিস এবং প্যারালাইসিসের লক্ষণ বিশিষ্ট ওই স্ট্রেনটি তিউনিসিয়াতে দেখা গিয়েছিল। যা সেসময় ধীরে ধীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অবশেষে কানাডা থেকে ভেনেজুয়েলা পর্যন্ত আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই পাখিদের ভাইরাসটির বাহক হিসাবে ধরা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের শরীরে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। বর্তমানে, ভাইরাসটি আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং পশ্চিম এশিয়ায় বেশি দেখা গিয়েছে।

ভারতে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের পরিস্থিতি কী?

ডা. সাহু জানিয়েছেন যে ভারতে, জাপানিজ এনকেফেলাইটিস এবং ডেঙ্গুর মতো ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের কোনও গুরুতর প্রাদুর্ভাব হয়েনি। এখনও পর্যন্ত যে ভাইরাসটি মহামারীর আকার নেয়নি সে ব্যাপারেও মত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। পাশাপাশি এদেশে প্রচুর পরিমাণে মশার ভেক্টরের উপস্থিতি রয়েছে এবং ভাইরাসের সম্ভাব্য নিউরোভাইরুলেন্ট স্ট্রেন থাকা সত্ত্বেও ভারতে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের সঙ্গে জাপানিজ এনকেফেলাইটিসের তুলনা করার মতো এখনো পরিস্থিত আসেনি। যদিও এই পরিস্থিতির কারণ এখন স্পষ্ট নয়, তবে ভারতে অন্যান্য ফ্ল্যাভিভাইরাসের উপস্থিতি ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের প্রভাব সীমিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের জন্য সুনির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম খুব একটা ব্যবহার হয় না। তাই রোগটি সনাক্ত করার কিংবা গুরুত্ব বোঝার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অসুবিধা হতে দেখা যায় । তবে যদি গবেষণায় জাপানিজ এনকেফেলাইটিস এবং ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের মধ্যে যোগসূত্র ধরা পড়ে তাহলে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের সংক্রমণে জেই ভ্যাকসিন কার্যকরী হতে পারে মত বিশেষজ্ঞদের।

প্রতিরোধের উপায় কী?

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
পুরীর রথ এবার রঘুনাথপুরে, থিমে মন কাড়ছে আপার বেনিয়াসোলের দুর্গাপুজো মণ্ডপ
আরও দেখুন

যেহেতু মানুষের ক্ষেত্রে ভাইরাসটি প্রতিরোধের এখনও কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ নেই তাই নিজেদের আমাদের সার্বিকভাবে সচেতন থাকা জরুরি। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং সচেতনতার মাধ্যমেই ভাইরাসের ঝুঁকি এবং সংক্রমণ কমানো যাবে। জ্বর হলে এবং ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে চারপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে মশারি ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করতে হবে। এছাড়া হালকা রঙের এবং শরীরকে আবৃত করে করে এমন পোশাক পরতে হবে, বাড়ির কোথাও জমা জলে, জলাশয়ে, পুকুরে যাতে মশার লার্ভা না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত নিজের চারপাশের জলা জায়গা, উঠোন ও বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে।

বাংলা খবর/ খবর/দেশ/
West Nile Virus|| কেরলে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসের সংক্রমণ! মশাবাহিত এই রোগ চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে, জানুন বিশদে
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল