কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন যে ২০২৬-এরমার্চ মাসের মধ্যে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ সম্পূর্ণ হবে। এই উদ্যোগের ফলে যোগাযোগ, পরিচালনমূলক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং অঞ্চলটিতে সুস্থির পরিবহণে সহায়ক হবে। ভৌগোলিক এবং লজিস্টিক অবস্থার প্রত্যাহ্বান সত্ত্বেও উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে এই সমস্ত বাধা-বিপত্তি সফলভাবে অতিক্রম করে যোগাযোগ, ভ্রমণ দক্ষতা এবং পণ্যবাহী পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্রমাগত উন্নতি অর্জন করেছে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ সব কিছুতেই খালি জেদ আর জেদ…! সন্তানের রাগ-বায়না-বিরক্তি কাটবে সহজেই, মা-বাবাদের জন্য ৫ মোক্ষম টোটকা
২০২৫-এর জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে ২,৮২৮রুট কিলোমিটার (আরকেএম) বৈদ্যুতিকীকরণ সম্পূর্ণ করেছে। রাজধানীরুটের বৈদ্যুতিকীকরণ ২০২৫-এর মার্চ মাসে সম্পূর্ণ হবে এবং সমগ্র উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে জুড়ে বৈদ্যুতিকীকরণের কাজ ২০২৫ ক্যালেন্ডার বর্ষশেষের দিকে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্য ধার্য করা হয়েছে। কাটিহার-গুয়াহাটি, গুয়াহাটি-লামডিং, লামডিং-ফরকাটিং,আগরতলা-সাব্রুম এবং আগরতলা-জিরিবামের মতো গুরুত্বপূর্ণ রুটগুলির বৈদ্যুতিকীকরণ আঞ্চলিক সংযোগ শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এবং অর্থনৈতিক বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের বৈদ্যুতিকীকরণের যাত্রা একাধিক মাইলস্টোন দ্বারাচিহ্নিত হয়ে রয়েছে, যা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে কাটিহার ডিভিশনে চালু করা ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের উপর দিয়ে প্রথম পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনের চলাচল, পরে ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল মাসে কাটিহার থেকে প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেসের চলাচলের মাধ্যমে। উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি নিউ জলপাইগুড়ি ও কলকাতার মধ্যে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের উপর প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেনের চলাচল, ২০২১ সালের ২২ অক্টোবর নিউ দিল্লি থেকে গুয়াহাটিতে ব্রহ্মপুত্র মেলের ঐতিহাসিক আগমন, ২০২২ সালের ২৬ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটি ও কাটিহারের মধ্যে ২০০০ কিমি-এর বেশি সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন আওতাভুক্ত করা এবং প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস চালু করা।
আরও পড়ুনঃ গ্রীষ্মের ফল কাঁঠাল দেখলেই লোভ হয়? ভুলেও ছোঁবেনই না ‘এঁরা’, যত দূরে থাকবেন ততই মঙ্গল
প্রধানমন্ত্রী নিউ জলপাইগুড়ি, নিউ কোচবিহার, নিউবঙাইগাঁও, রঙিয়া এবং গুয়াহাটি ইত্যাদি বড় বড় স্টেশন-সহ সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ পরিচালিত কাটিহার-লামডিং রুটটি উৎসর্গ করে অঞ্চলটির যোগাযোগ আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলেছেন। বৈদ্যুতিকীকরণ টিকিয়ে রাখতে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে মালদহ, শিলিগুড়ি এবং নিউ গুয়াহাটিতে ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ শেড স্থাপন করেছে, ডিজেল থেকে ইলেকট্রিক লোকোমোটিভে সম্পূর্ণ রূপান্তর সুবিধাজনক করতে আরও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
পণ্য পরিবহণের জন্য বর্তমানে ডব্লিউএজি ৯ সিরিজের ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ চলাচল করছে এবং প্রধান স্থানগুলিতে লোকো ট্রিপ পরিদর্শন শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়াও বৈদ্যুতিক শক্তির ওপেন অ্যাক্সেস উদ্যোগটি অগ্রগতির পর্যায়ে রয়েছে, যার ফলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে দেশজুড়ে একাধিক উৎস থেকে বিদ্যুৎ করতে পারবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ বৃদ্ধি করতে এবং রাজ্যের গ্রিডের উপর বোঝা হ্রাস করতে অসম জুড়ে একাধিক ট্র্যাকশন সাবস্টেশন চালু করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বাংলাতেই লুকিয়ে ছোট্ট ‘নিউজিল্যান্ড’! কোথায় জানেন? এত রূপ বসন্তে…! হোলির ছুটিতে ঘুরে আসুন
স্থিতিশীলতার প্রতি ভারতীয় রেলওয়ে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে নিজেদের তার পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে সৌর এবং বায়ু শক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছে। নিজেদের অধিক্ষেত্র জুড়ে ৫০ এমডব্লিউপি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করার পরিকল্পনা চলছে, যা সবুজ এবং আরও বেশি শক্তি সাশ্রয়ী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক রূপান্তরে সাহায্য করবে। সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিকীকরণ হলে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে আঞ্চলিক উন্নয়ন, পর্যটন ও অর্থনৈতিক বিকাশে আরও গুরুত্ব আরোপ করতে পারবে এবং রেল পরিবহণকে আরও দক্ষ ও পরিবেশ অনুকূল করে গড়ে তুলবে। সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিকীকরণ, স্ব-নির্ভর রেলওয়ে নেটওয়ার্ক অর্জনের লক্ষ্যে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে ভারতের সবুজ ও স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।
ভারত যেহেতু রেলওয়ে বৈদ্যুতিকীকরণের ১০০ বছর পূর্ণ করেছে তাই বাষ্প এবং ডিজেল থেকে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনের এই রূপান্তর আধুনিকীকরণ, দক্ষ এবং স্থিতিশীলতার প্রতি দেশের একনিষ্ঠতাকে প্রতিফলিত করেছে। একটি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক, স্ব-নির্ভর রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এখন হাতের মুঠোয়, যা ভারতীয় রেলওয়েতে এক নতুন যুগের পথ প্রশস্ত করেছে।
