হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর আপাতত তাঁর ভরসা ক্রাচ ৷ তাতে ভর দিয়েই তিনি প্রতিদিন ক্লাস নিতে আসেন সেঞ্চুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ গত ৬ বছর ধরে তিনি এখানে ফেলোশিপে ক্লাস করাচ্ছেন ৷ গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি পদার্থবিজ্ঞান-তপস্বী ৷ বয়সের ভার বাধা হয়ে দাঁড়ায় না তাঁর পথে৷ বলেন ‘‘স্বাস্থ্য থাকে আমাদের মনে৷ সম্পদ থাকে আমাদের হৃদয়ে ৷ আমাদের মন ও হৃদয়কে সব সময় তরতাজা রাখা প্রয়োজন ৷ আমি নিজেকে তো অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তুলনা করতে পারি না৷ কিন্তু আমি জানি একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছি৷ শেষ শ্বাসবিন্দু পর্যন্ত আমি শিক্ষকতা করে যাব৷’’
advertisement
ছাত্রছাত্রীদের কাছেও এই নবতিপর অত্যন্ত জনপ্রিয় ৷ তাঁর ক্লাস মিস করতে চান না পড়ুয়ারা ৷ তিনি নিজেও ক্লাসে এখনও পৌঁছন ঠিক সময়ে ৷ নিয়মানুবর্তিতার জন্য তিনি সকলের কাছে আদর্শ৷ নিজের বিষয়ে তিনি পড়ুয়াদের কাছে চলমান বিশ্বকোষ৷ অধ্যাপিকার পাশাপাশি তিনি একজন সমাজসেবীও৷ নিজের বাড়ি একটি ট্রাস্টকে দান করে তিনি থাকেন ভাড়া বাড়িতে ৷
আরও পড়ুন : পা কামড়ে ধরে যুবককে নদীতে টেনে নিয়ে গেল কুমির, আতঙ্কে শঙ্কিত গুজরাত
সন্থাম্মার জন্ম ১৯২৯ সালের ৮ মার্চ৷ মাত্র ৫ বছর বয়সে হারান বাবাকে ৷ তাঁকে বড় করে তোলেন পরিজনরা ৷ ১৯৪৫ সালে তিনি মহারাজা বিক্রম দেও বর্মার কাছ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্বর্ণপদক পান৷ অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করা মেধাবী সন্থাম্মা সেই প্রতিষ্ঠানেই পদার্থবিদ্যার লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ১৯৬৫ সালে ৷ লেকচারার, প্রফেসর, ইনভেস্টিগেটর, রিডার-সহ নানা ভূমিকা পালন করেছেন এই শিক্ষাসাধক ৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে তিনি কর্মরত ছিলেন ইনভেস্টিগেটিভ ইন চার্জ হিসেবে ৷
১৯৮৯ সালে ৬০ বছর বয়সে তিনি অবসর গ্রহণ করেন৷ তবে ‘অবসর’ শুধুই তাঁর কাছে একটা শব্দ মাত্র ৷ এর পর তাঁর বিচরণক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় গবেষণা৷ সাম্মানিক লেকচারার হিসেবে তিনি যোগ দেন অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৷
আরও পড়ুন : পা ফেলতেই হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে গেল ফুটপাত! কী হল পথচারীর, দেখুন রোমহর্ষক ভিডিও
প্রতিদিন ভোর চারটের সময় উঠে তিনি নোটস তৈরি করেন৷ জানিয়েছেন তিনি রোজ ৬ টা ক্লাস নিতে পারেন ৷ বিদ্যাচর্চার সুবাদে যোগ দিয়েছেন আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, স্পেন-সহ একাধিক দেশের কনফারেন্সে৷ অ্যাটমিক স্পেক্ট্রোস্কোপি এবং মলিক্যুলার স্পেকট্রোস্কোপিতে তাঁর কাজ তাঁকে এনে দিয়েছে একাধিক পুরস্কার ও স্বর্ণপদক ৷ তাঁর ছাত্ররা আজ আসীন উচ্চশিক্ষাকেন্দ্রে উচ্চপদে ৷
সন্থাম্মার স্বামীও ছিলেন তেলুগু ভষার অধ্যাপক ৷ তাঁর মৃত্যুর পর কেটে গিয়েছে কয়েক বছর ৷ স্বামীর হাত ধরে তাঁর পরিচয় হয়েছিল পুরাণ, বেদ. উপনিষদ এবং শ্রীমদ্ভগবতগীতার সঙ্গে ৷ পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি তাঁর অনায়াস চলন এ সব শাখাতেও৷ এ সব বিষয়ে বই লিখে পরবর্তী প্রজন্মকে আলোকিত করে যেতে চান এই শিক্ষাব্রতী ৷