জানা যায় তরফদার বাড়ির এই দুর্গাপুজো ১৭৫৫ সালে শুরু হয়। জনৈক গঙ্গোপাধ্যায় বাংলাদেশে বরিশালের ২০০ বছরের প্রাচীন বুড়ো মার নামে এই দুর্গাপুজো তরফদার বাড়িতে সূচনা করেন। এ দেশ ও দেশ মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো এই দুর্গাপুজো । তরফদার বাড়ির সদস্যরা জীবন জীবিকা এবং পেশার টানে রাজ্যের এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেন। বেশ কিছু বছর আগে তাঁরা মাঝেমধ্যে এক আধবার আসলেও শেষ কুড়ি বছর তাদেরও আর দেখা যায়নি। স্থানীয় বসবাসকারী এক শরিক প্রদীপ তরফদারদের পক্ষে ব্যয়বহুল দুর্গাপুজো চালানো অসম্ভব হয়ে ওঠেছিলো। তার উপর পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হওয়ায় বন্ধ ছিল এক বছর।
advertisement
তবে পাড়ার ক্লাবের সদস্যরা, ঠাকুরদালান এবং সংলগ্ন ছোট্ট একটু জায়গা, অর্থের বিনিময়ে শরিকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে, আবার মহাসাড়ম্বরে পুজো শুরু করেন। এ বিষয়ে বর্তমান এক শরিক জানাচ্ছেন, পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যুতে ক্লাব এই পুজোর দায়িত্ব নেয়, তার পর থেকে তা আর ফেরেনি পরিবারের হাতে। যদিও এতে তাদের প্রবল আপত্তি আছে এমন নয়, বিভিন্ন সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে বলেন তারাও বর্তমানে ক্লাব পরিচালিত পুজোয় অংশগ্রহণ করেন প্রতিবছরেই।
যদিও বিগত দুবছর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আর পাঁচটা পুজোর মতোই, আড়ম্বরহীন ভাবে পুজো করেছিলেন ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এ বছর তাদের বাড়তি পাওনা, সরকারি অনুদান। সম্প্রতি শান্তিপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সুব্রত ঘোষ সরকারি সহযোগিতার অনুমতি পত্র দিয়ে গেছেন তাদের হাতে। তাই ক্লাবের মহিলা সদস্যরা ঠিক করেছেন চার দিন ধরে চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তবে বহিরাগত কোনও শিল্পী নয়, পাড়া এবং শান্তিপুরের বিভিন্ন কলাকুশলীরা অংশগ্রহণ করবে তাতে। পুরনো রীতি অনুযায়ী, অষ্টমীতে মহাভোগ বিতরণ করা হবে সকলের জন্য। থোড়ের তরকারি, চালতার টক এবং চালকুমড়োর ভোগ হবে নবমী ও দশমীতে।
তবে সম্পূর্ণ সাবেকী আনায় সাত পুতুলের একচালার দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় উদ্যোক্তাদের। কারণ মাটির সাজে সময় এবং ধৈর্য লাগে অনেক তাই মৃৎশিল্পীর অভাব হয়ে পড়ছে ইদানিং। তাই আরও বেশি সময় নিয়ে রীতি অনুযায়ী জন্মাষ্টমীতে পাট পুজোর বদলে, পয়লা বৈশাখে পাট পুজোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল প্রতিমা নির্মাণের উদ্দেশে। যদিও রংয়ের কাজ বাদে সমস্তটাই মোটামুটি ভাবে প্রস্তুতি হয়ে গেছে। একই সঙ্গে প্রস্তুত রয়েছে কালী প্রতিমাও। কালীপুজোর আগে তা রং হবে।





