প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মপালের সময়ে গোকর্ণ গ্রামকে একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী সামন্ত রাজ্য বলে বর্ণনা করেছিলেন। গ্রামটি আরও এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পরিচিত। ১৯৯৩ সালের ঘূর্ণিঝড়ে গ্রামের অর্ধেক বাড়িঘর গাছপালা এমনকি পুকুরের জল পর্যন্ত বিধ্বস্ত হয়। প্রচুর মানুষ, গবাদি পশুর প্রাণহানি ঘটে। সেই ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা এখনও স্পষ্ট।
আরও পড়ুনঃ বীরভূমের এই গ্রামে পা দিতে কাঁপেন চোর-ডাকাতরা, ইতিহাস জানলে চমকে যাবেন
advertisement
বর্তমানে গ্রামে প্রায় ৪ হাজার মানুষের বসবাস । গ্রামটি শক্তিপুজোর জন্য প্রসিদ্ধ। প্রতিবছর গ্রামে কালীপুজো ঘিরে উৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পুজোর সময় আশেপাশের গ্রামগুলি ছাড়াও বাইরে থেকে প্রচুর দর্শনার্থীদের ভিড় জমে ।
এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে যে উন্মাদনা থাকে তা জেলার অন্য কোনও মহকুমায় দেখা যায় না। এক সময় এই গ্রামে ৮০-৯০টি কালীপুজো হত। বর্তমানে কমে গিয়ে এখন ৪৮ টি মত পুজো হয়। তাই এই গ্রামটিকে কালীক্ষেত্র বলা হয়। সমগ্র মুর্শিদাবাদ জেলার আর কোথাও এমন ধুমধাম চোখে পড়ে না। দুর্গাপুজোর থেকে কালীপুজোতে জৌলুস বেশি। বেশির ভাগ পুজো কমিটির বাজেট লক্ষাধিক টাকার ও বেশি হয়ে থাকে। প্রতিটি রাস্তা ঘাটে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। কয়েকটি পুজো কমিটিতে আবার অন্নভোগ ও রাত্রিবাসের ও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। পুজো কমিটিতে সেচ্ছাসেবক দল এবং কয়েকটি জায়গায় মেডিক্যাল ক্যাম্প ও বসানো হয় বলে জানা যায়।
আরও পড়ুনঃ বেনাগ্রাম কি সত্যিই ভৌতিক? নাকি নেপথ্যে থেকে অন্য কাহিনী? সাক্ষী ডাকাত কালী
গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ জানান, এই গ্রামের প্রাচীন পুজো বলতে শ্যামরায় কালী, বড়িজ্যা কালী, গঙ্গাময়ী কালী, কোটাল কালী, বড়রায় কালী, ছোট কালীবাড়ির পুজো, বেনেকালী উল্লেখযোগ্য। এখানকার বড়িজ্যা কালী ঘিরে একটি লোক কথা শোনা যায়, গ্রামের সব পুজো গভীর রাতে শুরু হলেও বড়িজ্যা কালীর পুজো সন্ধ্যায় শুরু হয়। শোনা যায় , একবার পুজোর সময় গ্রামের একটি শিশুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, গোটা রাত খুঁজেও শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে বড়িজ্যা কালীর মুখে ওই শিশুর পরনের কাপড়ের টুকরো দেখা যায়। তারপর থেকেই বড়িজ্যা কালীর পুজো শুরু হয় সন্ধ্যায় আর সূর্য ওঠার আগেই দেবীর নিরঞ্জন হয়।
প্রাচীন শ্যামরায় কালী, বড় রায় কালী, ছোট কালীবাড়ির কালী, গঙ্গাময়ী, বেনে কালী কৌলিক পুজো বলে পরিচিত। কালীপুজোকে ঘিরে বিসর্জনের দিন গোকর্ণ হাইস্কুল চত্বরে বিশাল মেলা বসে। এলাকায় লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করেন আতশবাজি প্রদর্শনী দেখার জন্য ।
কৌশিক অধিকারী