বাংলা তথা মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার আলকাপ গান এক সময় বিখ্যাত ছিল। গ্রাম বাংলার হাত ধরে উঠে আসা এই লোকগান এক সময় ছিল বিনোদনের প্রধান মাধ্যম। রাত জেগে মানুষ আলকাপ গান শুনেছেন বিভিন্ন পুজো অনুষ্ঠান উপলক্ষে। শিল্পীরা নিজেরাই গান বেঁধে অভিনয় করেন এই আলকাপ গানের। সমাজের ভাল খারাপ বিভিন্ন বিষয় গানের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এই আলকাপ গানে। সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে এই আলকাপ গান।
advertisement
আরও পড়ুনঃ খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে সুতিতে পথ অবরোধ করে, ব্যাপক বিক্ষোভ
বর্তমানে আলকাপ গান পঞ্চরস গান নামেই খ্যাত। আলকাপ গানে বেশ কিছু নতুন বিনোদন সংযোজন করা হয়েছে। অর্থাৎ একসময় শুধু অভিনয় ও গান হত। বর্তমানে আসর বন্দনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। তারপর শিল্পীরা বিভিন্ন গান করেন মঞ্চে। শিল্পীদের গান শেষে হাস্যকৌতুক, তারপর ট্রেলার শেষে থাকে আলকাপ গানের পালা। এই পাঁচ ধরণের বিনোদন একত্রিত করে নাম দেওয়া হয়েছে পঞ্চরস।
একসময় মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রামে এই পঞ্চরস বা আলকাপ গান অনুষ্ঠিত হতে দেখা যেত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলেছে মানুষের রুচি। এখন বিভিন্ন পুজো ও অনুষ্ঠানে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। গ্রাম বাংলার এই সমস্ত ঐতিহ্যবাহী লোকগান হলে আধুনিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মজেছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই পঞ্চরস গানের চাহিদাও তুলনায় ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ স্লেজে চড়ে নয়, ডিসেম্বরের আগেই উপহারের ডালি নিয়ে বাস্তবের রাস্তায় নামলেন সান্তা
তবে মালদাহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু গ্রামে এখনও এই লোকগানের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর মালদহের হবিবপুর ব্লকের দক্ষিণ চাঁদপুর কার্তিক পূজা উপলক্ষে সাতদিনব্যাপী আলকাপ বা পঞ্চরস গানের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই গ্রামে পঞ্চরস গান শুনতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু দর্শকের আগমন হয়। রাত জেগে মানুষ এখানে গান শোনেন।সময়ের সাথে বদলেছে মানুষের বিনোদনের মাধ্যম। পিছিয়ে নেই পঞ্চরস শিল্পীরাও। তারাও তাদের পালা গানের ধাঁচ বদলেছে। সব ধরনের দর্শকদের আকর্ষণীয় গড়ে তুলতে এই পঞ্চরস গানের মাধ্যমে আধুনিক থেকে পৌরাণিক সমস্ত বিনোদনের মাধ্যমকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন শিল্পীরা।
তবে বর্তমান প্রজন্ম এই লোক সংস্কৃতির সাথে জড়িত হতে চাইছেন না। বর্তমান প্রজন্ম এই অভিনয়ের সাথে যুক্ত না হওয়ায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্প। আগামীতে হয়তো হারিয়ে যাবে, মালদা তা মুর্শিদাবাদের এই লোকো সংগীত। তবে বর্তমানে যারা এই পেশার সাথে যুক্ত রয়েছেন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁচিয়ে রাখার।
হরষিত সিংহ