যে বয়সে হাতে পেন খাতা থাকা উচিত, সেই হাতে তখন জঙ্গল থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠ, ডালপালা ভরা থাকে। যে বয়সে পিঠে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে চলা উচিত, সেই বয়সে মাথায় সংসারের চাপ নিয়ে মুনিষ খাটে এখানকার শিশুরা। পড়াপাঠ (Education )আর ভরা পেট এদের জীবনের অঙ্গ নয়।
এই পাড়ায় বসবাসকারীদের সংখ্যা প্রায় একশো হলেও সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির গণ্ডি টপকেছে মাত্র একজনই। জাতিতে এরা খেড়িয়া শবর হলেও সব ধরনের স্বীকৃতির বাইরে এদের অবস্থান।
advertisement
পাড়া জুড়ে মদের অফুরন্ত জোগান। এখানে তাই শৈশব থেকেই নেশার হাতছানি। নাবালক অবস্থাতেই বিয়ে, সন্তান ধারণ। রয়েছে চূড়ান্ত অভাব, বঞ্চনা আর অপুষ্টি।
প্রতিদিন বাড়িতে চুলা জ্বলে না। হাঁড়িতে চাল পড়ে না। ভুখা পেটে কেটে যায় দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। অশিক্ষার অন্ধকারে নিম্নজ্জিত এখানে প্রায় সকলেই। সকলেই ভূমিহীন। ভিক্ষা ও দিন মজুরই উপার্জনের একমাত্র উপায় হলেও রোজগারের সিংহ ভাগই খরচ হয় নেশার পেছনে।
ফলে নেই কোন মানসিক বিকাশ। মানসিক বিকাশটুকুও মুখ থুবড়ে। পরের বাড়িতে চেয়েচিন্তে আর মেগেপেতে জোগাড় করা সামগ্রীতেই ক্ষুন্নিবৃত্তি কোনো রকমে। এমতাবস্থায় একেবারেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেই স্কুলবিমুখ বাগালপাড়ার দুয়ারেই বর্ণপরিচয় নামে একটি পাঠশালা স্থাপন করে এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দানের কর্মসুচি গ্রহন করা হলো মহালয়ার পূণ্যদিনে(education) ।
অর্থাৎ দেবীর চক্ষুদানের দিন। যাদের বর্ণের সাথে সামান্য পরিচয়টুকুও হয়নি, তাদের হাতে স্লেট খড়ি, খাতা পেন আর বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় তুলে দিয়ে অক্ষরজ্ঞান করানোর প্রচেষ্টায় এই বর্ণপরিচয়।
একমাত্র শিক্ষাই পারে যথার্থ পরিবর্তন আনতে। যাবতীয় সামাজিক কলুষতা নির্মূল করতে পারে বর্নপরিচয়ের অক্ষরজ্ঞান। আপাতত এই পাঠশালা চলবে সপ্তাহে চারদিন। নিয়োজিত হয়েছে একজন শিক্ষিকাও। উদ্দেশ্য, ছোটদের পাশাপাশি এখানকার বড়দেরও অক্ষর পরিচয় করিয়ে সাক্ষর করে তোলা।
শুধু তাই নয়, শিক্ষিত চেতনার বিকাশসাধনের মাধ্যমে যাবতীয় অন্ধকার থেকে এখানকার মানুষজনদের মুক্ত করাও বর্ণপরিচয় এর প্রাথমিক লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যের মূল উদ্যোগী দুই মেদিনীপুর জেলার দুই শিক্ষক। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের শান্তুনু অধিকারী এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের ভাস্করব্রত পতি।
এই দুই শিক্ষকের উদ্যোগে আজ ওই বাগাল শিশু গুলির হাতে বই, খাতা, পেন, ব্যাগ, টুথ ব্রাশ, খেলার সরঞ্জাম, পোষাক ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়। পরিচিত করানো অ আ ই ঈ এর সঙ্গে। আগামী দিনে পিছিয়ে পড়া এই পাড়াতে শিক্ষার আলো জ্বেলে শিক্ষিত সমাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য দুই শিক্ষকের।
Partha Mukherjee