মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখা যায়, ৭০৫-ই পেয়েছে অনির্বাণ। তার সর্বভারতীয় (All India) র্যাঙ্ক (General Rank) হয়েছে ৮২। আর ওবিসি র্যাঙ্ক হয়েছে ১৭। কলকাতার বিকাশ ভবনে কর্মরত শিক্ষা দপ্তরের কর্মী বাবা চন্দন দে পিঠ চাপড়ে দিয়ে ছেলেকে জানিয়েছেন, "মনে হচ্ছে তোর স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল! দিল্লি এইমসে আশা করছি সুযোগ পেয়ে যাবি।" এহেন আত্মবিশ্বাসী ছেলে যে আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেয়েও ছেড়ে দেওয়ার সাহস দেখাবে, এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে!
advertisement
প্রথম থেকেই অত্যন্ত মেধাবী মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের এই ছাত্র। ভালো ফল করেছিল মাধ্যমিকেও। ৭০০'র মধ্যে ৬৬৬ পেয়েছিল সে। আর, এবার উচ্চ মাধ্যমিকেও দুর্দান্ত রেজাল্ট করেছে অনির্বাণ। পেয়েছে ৪৮৯ (৫০০'র মধ্যে)। বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সর্বাধিক নম্বর (সর্বোচ্চ- ৪৯১) পেয়েছে সে। WBJEE এবং KVPY তেও ভালো র্যাঙ্ক করেছে অনির্বাণ। তবে, লক্ষ্য ছিল একটাই, 'নিট' এ ভালো র্যাঙ্ক করে চিকিৎসক হওয়া। আর, স্বপ্ন ছিল দিল্লি এইমস থেকেই MBBS পড়ার! সেই লক্ষ্যেই নিমগ্ন থেকে পড়াশোনা করেছে আদ্যন্ত মেধাবী ও মনোযোগী এই ছাত্র। শিক্ষা দপ্তরের কর্মী বাবা তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন, পাশে থেকেছেন, ভালো রেজাল্ট করার জন্য যা যা ছেলের দরকার সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে, সময় সেভাবে দিতে পারেননি! কারণ, মেদিনীপুর থেকে কলকাতা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে হয়েছে তাঁকে। সময় আর সাহচর্য দিয়েছেন মা অপরূপা দে।
বাবা চন্দন দে তাই একবাক্যে স্বীকার করলেন, "ছেলের এই সাফল্যে সর্বাধিক কৃতিত্ব ওর মায়েরই!" এও বললেন, "কয়েকজন গৃহ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। নামকরা কোচিং সেন্টারগুলো থেকে স্টাডি মেটেরিয়াল নেওয়া হলেও, ওকে আপাদমস্তক তৈরি করেছেন পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের গৃহ শিক্ষকরাই।" এসবের মাঝেও কিছুটা দুঃখ প্রকাশ করে ফেললেন চন্দন বাবু। বললেন, "ওর দাদু, মানে আমার বাবা ২০২০'র মে মাসে প্রয়াত হয়েছেন, উনি জীবিত থাকলে কি খুশিই না হতেন!" চন্দন বাবুর বাবা চিত্তরঞ্জন দে ছিলেন কেশপুর ব্লকের তেঘরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক। দাদুর আদর্শ আর বাবা-মা'র অনুপ্রেরণা নিয়েই, একজন মানব দরদী চিকিৎসক হয়ে উঠতে চায় অনির্বাণ। মেদিনীপুরের এই তেজস্বী ছেলের সেই স্বপ্নপূরণের আলোকে একদিন আলোকিত হবেই চিকিৎসা জগৎ, বলছেন এই শহরের সমগ্র শিক্ষা জগৎ।