হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিনেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি ভারী বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে জল সংকটের মুখে পড়তে পারে পশ্চিম বর্ধমান জেলা সহ বাঁকুড়া এবং পূর্ব বর্ধমান জেলা(West Bardhaman News)। তীব্র গরমে কয়েকদিন পার করলেও, এখনও পর্যন্ত সেই অর্থে জল সংকট দেখা যায়নি জেলাগুলিতে। কিন্তু আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত না হলে দেখা দিতে পারে জল সংকট। বিশেষ করে কোপ পড়তে পারে সেচের জন্য জল সরবরাহে। তাছাড়াও কারখানা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জায়গাগুলিতেও জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
advertisement
এখন প্রশ্ন, হঠাৎ কেন জল সংকট দেখা দেবে? পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার জল সরবরাহের অন্যতম উৎস দামোদর নদ (Damodar)। দামোদর নদের ওপর নির্মিত বাঁধগুলি, অর্থাৎ মাইথন, পাঞ্চেত, দুর্গাপুর ব্যারেজে যে জল সংরক্ষিত থাকে, তা সরবরাহ করা হয় বছরভর। কিন্তু তীব্র গরম কাটিয়ে যদি আরও দুই সপ্তাহ ভারী বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে বাঁধগুলিতে সংরক্ষিত জলের পরিমাণ অনেকটাই নেমে যাবে। যার ফলে মাইথন, পাঞ্চেত ড্যাম থেকে জল ছাড়া কমানো হবে। তখন দুর্গাপুর ব্যারেজেও সংরক্ষিত জলের পরিমাণ কমবে।
মাইথন এবং পাঞ্চেত ব্যারেজের ওপর যেমনভাবে আসানসোল সহ সংলগ্ন এলাকাগুলি নির্ভরশীল, তেমনভাবেই দুর্গাপুর ব্যারেজের ওপর নির্ভরশীল দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সহ বাঁকুড়া জেলা। ফলে এই বাঁধগুলিতে জলের পরিমাণ কমে গেলে, জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি ভারী বৃষ্টি না হয়, তাহলে এই সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন ডিভিসির আধিকারিকরা। সূত্রের খবর এমনটাই।
দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত যে পরিমাণ জল মাইথন বা পাঞ্চেত ব্যারেজে সংরক্ষিত রয়েছে, তা এইসময় স্বাভাবিক। গতবছর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জেরে মাইথন এবং পাঞ্চেত ড্যামে বাড়তি জল সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল। যে কারণে এই তীব্র গরমের সময়ে ওয়াটার লেভেল স্বাভাবিক রাখা গিয়েছে। কিন্তু যদি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে ওয়াটার লেভেল নেমে গিয়ে জল সংকট দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে ডিভিসির আধিকারিকরা বলছেন, দামোদরের আপার ভ্যালি অর্থাৎ ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ অংশে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে, যেমন মাইথন এবং পাঞ্চেত ব্যারেজের সংরক্ষিত জল কমে যাবে, তেমনভাবেই দুর্গাপুর ব্যারেজের আপার ভ্যালিতে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে, সেখানেও ওয়াটার লেভেল নামবে। তখন দুর্গাপুর, আসানসোল সহ বাঁকুড়া জেলায় জল সংকট দেখা দিতে পারে।
তাছাড়াও, এই মুহূর্তে মাইথন বাঁধে যে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রয়েছে, সেটি চালানোর জন্য কম পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে। তিনটি ইউনিট এর বদলে খুলে রাখা হচ্ছে একটি ইউনিট। তারপর সেই জল আপাতত সেচের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জলের পরিমাণ কমে গেলে সেচের জলের ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিতে পারে। তাই আপাতত দামোদরের ওপর নির্ভর করছে আসানসোল-দুর্গাপুর সহ বাঁকুড়ার 'জলভাগ্য'।
Nayan Ghosh