চলতি বছরে এই দুর্গা পূজো ৩১৬ বছরে পা দিল(Durga Puja 2021)। এখন চ্যাটার্জি পরিবারের জমিদারিত্ব আর নেই। তবে জমিদার আমলের শুরু হওয়া এই দুর্গাপূজোয় এখনও চলে আসছে জমিদার আমলের নিয়ম।
একসময় কুলডিহা গ্রামের জমিদার ছিলেন জানকিনাথ চ্যাটার্জী(Durga Puja 2021)। তিনিই দুর্গাপুজো শুরু করেন। জমিদার আমলে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে শুরু হয় এই দুর্গাপুজো। সেই জমিদারিত্ব এখন আর নেই। তবে পুজোর জৌলুস এখনও কমেনি।
advertisement
এখনও সমস্ত প্রাচীন রীতি মেনেই হয়ে আসছে চ্যাটার্জি বাড়ির পুজো(Durga Puja 2021)। এই পুজোর বিসর্জন বিশেষভাবে আকর্ষণীয় গ্রামের মানুষের কাছে। চ্যাটার্জী পরিবারের দুর্গা পুজোর বিসর্জন দেখতে এখনও বহু মানুষ বাইরে থেকে আসেন। কুলডিহার দুর্গাপুজোর বিসর্জনের দিন পাশের হাজরা পাড়ার পুরুষরা লাঠি খেলেন। তারপর কাঁধে করে দেবীকে নিয়ে গিয়ে নিরঞ্জন করা হয়।
শাস্ত্রমতে দুর্গা পুজোয় সানাই বাজানো নিষিদ্ধ(Durga Puja 2021)। তবে চ্যাটার্জি পরিবারের দুর্গা পুজোয় ঢাক, ঢোলের সঙ্গে থাকে সানাই। শাস্ত্রের তোয়াক্কা না করে দুর্গাপুজোয় এই বিশেষ নিয়ম এখনও চালু রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে কেন দুর্গাপুজোতে সানাই বাজানোর মত কাজ জানকিনাথ চট্টোপাধ্যায় শুরু করেছিলেন, তার উত্তর পরিবারের সদস্যদের কাছে অজানা।
বছরের পর বছর ধরে বাড়ির দুর্গাপুজোর(Durga Puja 2021) রীতিনীতি দেখে আসছেন পরিবারের সদস্যরা। রীতি অনুযায়ী সমস্ত আচার আচরণ মেনে পুজোর আয়োজন করেন তারা। বংশপরম্পরায় সেই রীতি এক পুরুষ থেকে অন্য পুরুষের কাঁধে চলে যায়। এভাবেই ৩১৬ বছর ধরে চলে আসছে পুজো।
নিয়ম অনুযায়ী এখানে বৈষ্ণব মতে দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয়। তাই এখানে পশুবলির কোনও প্রচলন নেই। পুজোর পুরনো প্রথা মেনে, দেবীর ভোগ রান্না করেন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। এখানে দেবীর ভোগ দেওয়া নিয়ে বিশেষ নিয়ম চালু রয়েছে।
মহা সপ্তমীর দিন এখানে দেবীকে সাত রকম ভাজার সঙ্গে সাত শের চালের ভাত ভোগ দেওয়া হয়। ব্যবহার করা হয় সাতটি(Durga Puja 2021) থালা। অষ্টমী তিথিতে দেবীকে আট রকমের ভাজার সঙ্গে মহাভোগ দেওয়া হয়। এই মহাভয় তৈরি করতে লাগে নয় শের গোবিন্দভোগ চাল এবং ৪০ কেজি দুধ। এই দুই সামগ্রী দিয়ে পায়েস বানিয়ে দেবীকে মহাভোগ দেওয়া হয়। নবমীর দিন নয় রকম ভাজার সঙ্গে নয় শের চালের খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয় দেবীকে।
চ্যাটার্জি পরিবারের জমিদার জানকিনাত চ্যাটার্জী একটি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। বাঁধটির নামকরণ করা হয় তার নামে। সেখান থেকেই আনা হয় দেবীর নবপত্রিকা। অন্যদিকে জনকিনাথ চ্যাটার্জির স্ত্রী লক্ষ্মী দেবীর নামে রয়েছে একটি বড় পুকুর। সেই লক্ষ্মীসায়রে দেবীর নিরঞ্জন দেওয়া হয়। দেবী প্রতিমায় বিশেষ কোনও পরিবর্তন এখানে চোখে পড়ে না।
তবে নবপত্রিকা বা কলাবউ গণেশের পাশে না(Durga Puja 2021) রেখে, রাখা হয় কার্তিকের পাশে। জমিদারি আমলে চালু হওয়া এই সমস্ত নিয়ম মেনে, দীর্ঘ ৩১৬ বছর ধরে চলে আসছে চ্যাটার্জী পরিবারের দুর্গা পুজো। পরিবারের সদস্যরা সমস্ত রীতিনীতি মেনে পুজা চালিয়ে যাচ্ছেন এখনও। জমিদারিত্ব না থাকলেও ,জমিদারি আমলের পুজোয় শুরু হওয়ার নিয়ম, এখনও অটুট রেখেছেন তারা।
Nayan Ghosh