গত দু'বছরে এক লাফে প্রায় তিনগুণ হয়েছে শিল্পাঞ্চলে গণেশ পুজোর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পারিবারিকভাবে গণেশ পুজোর সংখ্যাও। মৃৎশিল্পীরা দাবি করছেন, করোনাকালে অনেকেই তাদের কর্মসংস্থান হারিয়েছেন, সুখ-শান্তি হারিয়েছেন। তাই জীবন যাতে সুন্দর ভাবে চলে, সেজন্য সুখ-সমৃদ্ধির ভাষায় গণেশ বন্দনায় মেতে উঠছেন দুর্গাপুরের মানুষ।
২০১৯ সাল পর্যন্ত দুর্গাপুরে বড় গণেশ পুজোর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকটা যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দুর্গাপুর স্টেশন বাজারে অবস্থিত আলাপ ক্লাবের গণেশ পুজো। গণেশ পুজোর মধ্যে দিয়ে পুজোর মরশুম শুরু হয়ে যেত দুর্গাপুরে। তবে বিগত কয়েক বছরে জৌলুস হারিয়েছে শিল্পাঞ্চলের অন্যতম পুরনো এই গণেশ পুজোটি। কিন্তু করোনাকালে সিদ্ধিদাতার বাড়বাড়ন্ত হয়েছে শিল্পাঞ্চলে। প্রচুর সংখ্যক গণেশ পুজো হয়েছিল বিগত বছরে। এই বছরে সেই সংখ্যা আরও কিছুটা বেড়েছে। বেড়েছে পারিবারিক পুজোর সংখ্যাও। মৃৎ শিল্পীদের হিসেব বলছে, দু\'বছর আগে পর্যন্ত যে সংখ্যক প্রতিমা তারা বিক্রি করতেন, এবছর সেই সংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
advertisement
লকডাউন এর জন্য পরপর দু'বছর নামো নমঃ নমঃ করে সমস্ত পুজো সারছেন উদ্যোক্তারা। ফলে উপার্জন কমেছে মৃৎশিল্পীদের। কিন্তু সিদ্ধিদাতা গণেশের আশীর্বাদে মৃৎশিল্পীদের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা বলছেন, এতদিন পর্যন্ত দুর্গাপুরে মৃৎশিল্পীদের অন্যতম ভালো সময় ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। প্রচুর সংখ্যক প্রতিমা তারা বিশ্বকর্মা পুজোয় বিক্রি করতেন। কলকাতার পরে, সবচেয়ে বেশি দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয় দুর্গাপুরেই। কিন্তু আগের বছর থেকে সেখানেও ভাটা পড়েছে। তবে গণেশ পুজোর সংখ্যা বাড়ায়, উপার্জন বেড়েছে তাদের।
এক মৃৎশিল্পী জানিয়েছেন, দু'বছর আগেও তিনি ১২ থেকে ১৩ টি গণেশ মূর্তি বিক্রি করতে পেরেছিলেন। এবছর সেই সংখ্যা তিরিশের বেশি। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরে, এতদিনে দুর্গাপুজোর জন্য অনেক প্রতিমার অর্ডার তিনি পেয়ে যেতেন। এবছর সেই সংখ্যা অনেকটাই কম। বিশ্বকর্মা প্রতিমা তৈরীর ক্ষেত্রে যদিও সংখ্যার হেরফের বিশেষ হয়নি বলেই তিনি দাবি করেছেন।
একযোগে দুর্গাপুরের ছোট-বড় কুমোরটুলির বিভিন্ন মৃৎশিল্পীরা বলছেন, তাদের সমস্ত ওয়ার্কশপে প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয়েছে গণেশ মূর্তি। বিভিন্ন ক্লাব, সংস্থা, ব্যবসায়ীদের থেকে গণেশ মূর্তি তৈরি করার অর্ডার পেয়েছেন তারা। এছাড়াও পারিবারিক পুজোর জন্য গণেশ মূর্তির সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
কিন্তু কী কারণে সিদ্ধিদাতার আরাধনায় মজে উঠছে ইস্পাতনগরী? অনেকেই বলছেন, গনেশকে সুখ-সমৃদ্ধি, সিদ্ধির দেবতা বলা হয়। করোনা মহামারীর জেরে অনেক পরিবারই তাদের সুখ, সমৃদ্ধি হারিয়েছে। অনেক মানুষ এই মহামারীর সময় আতঙ্কিত রয়েছেন। সেই কঠিন সময় থেকে বেরিয়ে আসতেই, সিদ্ধিদাতার আরাধনায় মেতে উঠছেন শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।
Nayan Ghosh