TRENDING:

Kali Puja 2021|| চা-বলয়ে বন্যজন্তুর হাতে প্রাণরক্ষায় দেবী এসেছিলেন ভক্তের ডাকে! গায়ে কাঁটা দেওয়া ইতিহাস...

Last Updated:

Kali Puja 2021: বহুবার গহনা চুরি গিয়েছিল, কিন্তু অলৌকিক কারণে দিনকয়েক পরই চুরি যাওয়া গহনা যথাস্থানে পৌঁছয়।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#শিলিগুড়ি: সালটা তখন ১৯৫৭। সুকনা চা বাগানে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বহু বছর। সুকনা চা বাগানে মা কালীর এই প্রতিমা স্থাপন করেন বাগানের মালিক ও প্রধান কর্তা কিশন কল্যাণী। তিনিই এই পুজোর উদ্যোগ নেন। এখানে পাঁঠা, মোরগ, সবজি বলির প্রথা সেই ৬৪ বছর ধরে চলে আসছে।
সুকনা চা বাগানের কৃষ্ণবর্ণা মা কালী
সুকনা চা বাগানের কৃষ্ণবর্ণা মা কালী
advertisement

চারিদিকে পাহাড়, জঙ্গল! মাঝখানে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে সুকনা চা বাগান। সেই স্বাধীনতার আমল থেকে। পুরোনো বাড়িগুলি যেন জানান দিচ্ছে ইতিহাসের। চা বাগানের পথ ধরে সোজা হাঁটলেই চা ফ্যাক্টরী পেরিয়ে ডান হাতে পড়বে মায়ের মন্দির। ডোমাকৃতির এই মন্দিরে শ'য়ে শ'য়ে মানুষ মানত করতে আসেন। রীতি মেনে প্রত্যেক অমাবস্যায় পুজো হয়। ভোগ নিবেদন ও বিতরণও হয়। কালীপুজোয় এই রীতি বহাল থাকছে। মন্দিরে মা কৃষ্ণবর্ণা। কথিত রয়েছে, মায়ের চোখের দিকে অসৎ কিছু মনে নিয়ে তাকালে শীঘ্রই গ্লানিতে চোখ নামিয়ে নিতে হয়। এমনই তীক্ষ্ণ মায়ের দৃষ্টি। তবে এই মা-ই রক্ষা করতেন বাগানের সবাইকে। বাগানের মালিক থেকে শুরু করে শ্রমিক, সবাই তাঁর আশ্রয়েই বেড়ে উঠছে। দু হাত ভরে রক্ষা করে চলেছেন তিনি বন্য জন্তু থেকে শুরু করে অন্যান্য বিপদ থেকে।

advertisement

১৯১৩ সালে শুরু হয়েছিল বাগানের পথচলা। তখন থেকেই বাগানে শুরু হয়েছে পুজো। বাগানের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে লাল মন্দির। মন্দিরের বাইরে স্বল্প জায়গাজুড়ে মাঠ। সেখানে সময় বলি হয়। বৈঠক জমে দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষদের। ঠিক কোন সালে এই পুজো শুরু হয়েছিল, তা জানা নেই কারও। তবে শতাধিক বছর পুরোনো এক বট গাছ রয়েছে যার অস্তিত্ব এখনও স্পষ্ট। বট গাছের বয়সেরই হয়ত এই মন্দির, বলেন স্থানীয়রা।

advertisement

মায়ের চোখ, জিভ উভয়ই সোনার। এই মূর্তি ভীষণ জাগ্রত। তাই তো হাজার হাজার মানুষ এখানে মানত করেন। মানত পূরণ হলে কালী পুজোয় দেওয়া হয় বলি। মাকে উপহার স্বরূপ দেওয়া হয় সোনার গয়না, মুকুট ইত্যাদি। বলির পাঠা প্রসাদ হিসেবে বাগানের সবার মধ্যে বিতরণ করা হয়।

সুকনা চা বাগানের ইতিহাস অনুযায়ী বাগানের মালিক এবং তাঁর পরিবার ভগবানের উপর ভীষণ আস্থা রাখেন। তাই তাঁদের খুব পছন্দের একটি জায়গা এই মন্দির। এছাড়া পুজোতে কোনওরকম ত্রুটি রাখতে চান না তাঁরা। করোনাকালে হাজার সমস্যা থাকলেও কোনওবারই বন্ধ হয়নি পুজো। বাগান কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর পুজোর সমস্ত আয়োজন করে এসেছে। এবারও তা ব্যতিক্রম নয়। গত বছর মন্দিরের ছোট্ট গেটে লাগানো হয়েছিল কোভিডবিধি মেনে চলার পোস্টার। সেই মতেই এসেছিল সবাই। এবারও সেই নিয়ম বহাল রয়েছে।

advertisement

পুরোনো যুগের মানুষের মুখে শোনা যায়, দুর্গা পুজো ও কালী পুজোর সময় নাকি এখানে বসত আসর। আশেপাশের গ্রাম ও চা বাগানগুলি থেকে আসতেন অনেকে। মন্দিরে চত্বরে হতো পুজো এবং সেখানেই বসে সবাই আড্ডা দিতেন। অঞ্জলির সময় বাগানের আদিবাসী শিশুরা প্রবল উৎসাহ নিয়ে হাজির হত। এখনও সেই ধারা বহাল রয়েছে। কালীপুজোর সময় বাইরে থেকে কোনও মূর্তি বা প্রতিমা আনা হয় না। কৃষ্ণবর্ণা মায়ের পায়েই নিবেদন করা হয় পুজো।

advertisement

মন্দির প্রাঙ্গণেই হয় বলি। প্যান্ডেল করে বসার জায়গা বানানো হয়েছে। সেখানে সারারাত দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসে পুজো এবং বলি দেখবেন। মায়ের কাছে মানত করবেন এবং অপেক্ষা করবেন পরের বছরের পুজোর।

১৯৯৪ থেকে এই মন্দিরে পুজো করছেন শিলিগুড়ি নিবাসী গোপাল গোস্বামী। তিনি জানান, আশেপাশের প্রচুর মানুষ উপভোগ করতে আসেন এই পুজো। তিনি বলেন, 'সারারাত ধরে পুজো চলবে। তাই সকাল থেকেই মাকে নতুন শাড়ি, সোনার অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়। মন ও চোখ জুড়িয়ে যায় মায়ের সেই রূপ দেখলে। স্থানীয় সবাই, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে মাকে সাজাতে আসেন।' তিনি জানান, ২০২০ সালে ২২ টি পাঁঠা বলি হয়েছিল। এই বছর প্রায় ২৪টা হওয়ার কথা রয়েছে।

চা বাগানের ম্যানেজার (manager) ভাস্কর চক্রবর্তী বলেন, 'সোনার অলঙ্কার দিয়ে আগাগোড়াই সুসজ্জিত থাকেন মা কালী। মণ্ডপে এলেই মন ভরে যায়।'

চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার (deputy manager) তথা পুজো কমিটির সেক্রেটারি পার্থ প্রতিম চক্রবর্তীর কথায়, 'পুজোর জোগাড় ও অন্যান্য কাজ আমরা সবাই মিলেমিশেই করি। সবাই মিলে উৎসাহের সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। সারারাত ধরে মণ্ডপে থাকি। হৈ হুল্লোড় হয়। অন্যান্য বছর এখানে একদিনের মেলা বসত। কিন্তু করোনার চোখ রাঙানিতে সেই মেলার এখন আর আমরা অনুমতি দি না।'

বাগানের সিনিয়র ফ্যাক্টরী অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার (senior factory assistant manager) তথা পুজো কমিটির সহ-সেক্রেটারি অশোক সরকার বলেন, 'এই পুজো আমাদের প্রাণের পুজো। পুরো বাগান আলোকিত হয়ে ওঠে। উৎসব যেন আমাদের বাড়ির। এমনটাই মনে হয়। মন্দিরে বসলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। তবুও আমরা যথাযথ করোনাবিধি পালন করব। এখানে আট থেকে আশি, সবাই আসেন, আনন্দ করেন।'

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

Vaskar Chakraborty

বাংলা খবর/ খবর/Local News/
Kali Puja 2021|| চা-বলয়ে বন্যজন্তুর হাতে প্রাণরক্ষায় দেবী এসেছিলেন ভক্তের ডাকে! গায়ে কাঁটা দেওয়া ইতিহাস...
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল